সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলনে একাট্টা হচ্ছে নির্বাচন বর্জনকারী সব দল

জনদুর্ভোগ জনপ্রতিনিধি জাতীয় নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলনে একাট্টা হচ্ছে প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল। সামনে যুগপৎ কিংবা একই প্ল্যাটফরম থেকে আন্দোলনে নামছে দল ও জোটগুলো। আগামী ১৭ই ডিসেম্বরের পর থেকে দলগুলো একই ধাঁচের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে চায়।

এই আন্দোলন যুগপৎভাবে নাকি একই মঞ্চ থেকে করা হবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বেশির ভাগ নেতারা আন্দোলন একই মঞ্চে থেকে করার পরামর্শ দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ যুগপৎভাবে করার কথা বলছেন। এ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনাও করেছেন বিএনপি-জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল এবং জোটগুলোর শীর্ষ নেতারা। সামনে আরও আলোচনা হবে।

যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বেশ কয়েকটি দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব দলগুলো চাইছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যেসব দল নির্বাচনে নেই তাদের সবাইকে একত্রিত করে একইসঙ্গে এক প্ল্যাটফরম থেকে রাজপথে নামতে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা প্রায় প্রতিটি দলই চাইছে আগামী দিনের কর্মসূচিগুলো একই মঞ্চে থেকে হোক। বর্তমানে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর বাইরে জামায়াত আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। দলগুলো চাইছে জামায়াতও যাতে তাদের সঙ্গেই কর্মসূচিতে একাত্ম হতে পারে।

গণতন্ত্র মঞ্চের দু’একটি দল এ বিষয়ে কিছুটা আপত্তি তুললেও পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা এখন নমনীয় হয়েছে। বলা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ছোটখাট বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হলে বড় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একটি দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, এই আন্দোলনে জামায়াতকে একসঙ্গে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে বেশির ভাগ দলই একমত হয়েছে। তেমন কেউ বিরোধিতা করেননি। এখন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান দল বিএনপি।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সব দলগুলোই আন্দোলন করছে। এই বিষয়টি এখন মুখ্য। আর সামনে আন্দোলন যুগপৎভাবে হবে, না কি একই মঞ্চে থেকে হবে- সেটা পরের ব্যাপার।

জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা এখন যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন করছি। আর এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
এই আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতিমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলো কর্মসূচির বিষয়ে তাদের মতামত বিএনপিকে জানিয়েছে। তারা সবাই জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচির কথা বলেছে। কারণ তারা এখন একসঙ্গে রাজপথে নামতে চাচ্ছে। এজন্য জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। এরমধ্যে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, গণমিছিল এবং ঘেরাও কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচির পাশাপাশি অবরোধ এবং হরতালও চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে দল ও জোটগুলো।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আর জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনে থাকতে পারে। একই দাবির ভিত্তিতে সবাই একসঙ্গে আন্দোলন করুক। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

বাংলাদেশ এলডিপি’র মহাসচিব ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আন্দোলনরত যত দল একই মঞ্চে এসে মিছিল করবে আন্দোলন ততই শক্তিশালী হবে। তাই এখানে বাম ও ডানপন্থি বিবেচ্য বিষয় নয়।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আমরা একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছি। এর আগেও একই প্ল্যাটফরমে ছিলাম। আর এখন আন্দোলন একই পয়েন্ট, একই ছাতা ও একই প্ল্যাটফরমে হওয়া উচিত।

এদিকে একদফা আন্দোলনের সঙ্গে যুগপৎভাবে নেই বাসদ, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তবে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে নিজস্ব কর্মসূচিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এরমধ্যে গত ২৮শে নভেম্বর বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় সংলাপ করেছে ইসলামী আন্দোলন। এই সংলাপে বিএনপি’রও প্রতিনিধি ছিলেন। পাশাপাশি তারা বিএনপি’র কর্মসূচিগুলোতে সমর্থনও জানিয়েছে। আর বাম গণতান্ত্রিক জোট যুগপৎ আন্দোলনে নেই। তবে এই আন্দোলনে তারা না থাকলেও বিএনপি’র সঙ্গে রাস্তায় কর্মসূচি নিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জোটের নেতারা।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমরা আমাদের মতো করে আন্দোলন করছি। কোনোদিন বিএনপিও কর্মসূচি দিবে এবং আমরা সেদিন কর্মসূচি দিতে পারি। সেই কর্মসূচি মিলে যেতে পারে। সেদিন রাস্তায় দেখাও হয়ে যেতে পারে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমরা আমাদের মতো করে আন্দোলন করছি। ভবিষ্যতে পরিবেশ ও পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটা আগে বলা যায় না। কিন্তু আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাই।

ওদিকে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও বিএনপি’র কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে এবি পার্টি। আর ভবিষ্যতে বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না দলটি। তবে এবিষয়ে বিএনপি এখনো এবি পার্টির সঙ্গে কথা বলেনি।

এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, এখনো প্রস্তাব আসেনি। তবে বিএনপি উদ্যোগ নিলে আমরা বিবেচনা করে দেখবো। আর তাদের মৌলিক দাবিগুলোর সঙ্গে আমাদের দাবিগুলোও এক।

আরো পড়ুন : আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির অর্থবহ আলোচনা, হয়নি আসন সমঝোতা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *