সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা ১নং আমলি আদালতে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকসহ ৫৪ জন এবং ৭নং আমলি আদালতে সাবেক এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরসহ ২৬ জনের নামে পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পদ্মশাখরা গ্রামের মৃত এজাহার আলী গাজীর ছেলে মো. শহর আলী গাজী এবং দেবহাটার দক্ষিণ নাংলা গ্রামের আব্দুল হান্নান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
আদালত বাদীর দায়ের করা অভিযোগ দুটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানা ও দেবহাটা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পদ্মশাখরা গ্রামের মৃত এজাহার আলী গাজীর ছেলে মো. শহর আলী গাজীর দায়ের করা অভিযোগে বর্ণিত আসামিরা হলেন- সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি এনামুল হক, ডিবি প্রধান আব্দুল হান্নান, এসআই আব্দুল মালেক, এসআই আবুল কালাম, ভোমরার মৃত সোনা গাজীর ছেলে ওহিদুল ইসলাম, ভোমরা দাসপাড়ার আব্দুস সোবহানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম, হাড়দ্দহার মৃত বাদল গাজীর ছেলে শহিদুল ইসলাম গাজী, মৃত মোহম্মদ মোল্লার ছেলে আব্দুল গনি, পদ্মশাখরার মৃত আব্দুর রহিম গাজীর ছেলে মফিজুল ইসলাম, খানপুরের নজরুল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম খলিল, চৌবাড়িয়ার মফিজ উদ্দীন সরদারের ছেলে আব্দুস সাত্তার সরদার, আব্দুল গনির ছেলে মোশারফ হোসেন, পদ্মশাখরার মৃত এমাম বক্স গাজীর ছেলে রেজাউল ইসলাম, ভোমরার মৃত মোকসেদ গাজীর ছেলে আনারুল ইসলাম গাজী, লক্ষ্মীদাড়ীর মৃত কাদের মোল্লার ছেলে জালাল উদ্দীন, হাড়দ্দহার আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে খলিলুর রহমান, হাড়দ্দহার আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে তরিকুল ইসলাম, হাড়দ্দহার মৃত নেছার উদ্দীনের ছেলে এমাদুল ইসলাম, পদ্মশাখরার মৃত আব্দুর রহিম বক্সের ছেলে শহীদুল ইসলাম, ভোমরার আবু শেখের ছেলে আনসার আলী, পদ্মশাখরার সায়েদ ফকিরের ছেলে আবু বক্কর ফকির, ভোমরার আনসার আলীর ছেলে ইসমাঈল হোসেন, ভোমরার হারু কাপালীর ছেলে সুবাস, লক্ষ্মীদাড়ীর মৃত কাদের মোল্লার ছেলে জালাল মোল্লা, বিজয় কৃষ্ণ ঘোষের ছেলে হারু ঘোষ, পদ্মশাখরার রমজান গাজীর ছেলে আব্দুল গফুর গাজীসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জন।
বাদী আদালতে দাখিল করা অভিযোগে উল্লেখ করেন- ১ থেকে ৬নং আসামি একই চেইন অব কমান্ডের অন্তর্ভুক্ত এবং ৭ থেকে ২৬নং আসামি হত্যার ষড়যন্ত্রকারী, হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং পুলিশকে সরেজমিন সাহায্য সহায়তাকারী ব্যক্তি। বাদী একজন কৃষক মানুষ। বাদীর ছোট ছেলে আবু হানিফ ছোটনের বয়স ১৫ বছর। সে ভোমরা ইউপি দাখিল মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণির ছাত্র।
গত ১৭/০১/২০১৪ তারিখ সকালে ৭নং আসামির নেতৃত্বে তার ভোমরার বাড়িতে ৭ থেকে ২৬নং আসামিরা এক যৌথ মিটিংয়ে সমবেত হয়। তারা ওই মিটিংয়ে বাদীকে অথবা বাদীর পরিবারের যেকোনো একজনকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ১ হতে ৩নং আসামির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
আসামিদের পরিকল্পনার বিষয় সাক্ষীর মাধ্যমে বাদী খবর পায়। খবর পাওয়া মাত্র ১৭/০১/২০১৪ তারিখের দুপুরে বাদী নিকটস্থ প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাদীর অপর তিন ছেলে আশপাশের প্রতিবেশীর বাড়িতে লুকিয়ে থাকেন।
বাড়িতে বাদীর স্ত্রী ও ছোট পুত্র ছিল। গত ১৭/০১/২০১৪ তারিখ বিকাল অনুমানিক সাড়ে ৫টায় ওসি এনামুল হকের নেতৃত্বে ৫ ও ৬নং আসামিসহ ৭-৮ জন ফোর্স ও ৭, ৯, ১১, ১২, ১৭, ১৯, ২০ ও ২১নং আসামিরা পুলিশের সঙ্গে বাদীর বাড়িতে গিয়ে বাড়ি ঘেরাওপূর্বক বাদীকে এবং বাদীর ছেলেদের খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। বাড়িতে থাকা বাদীর স্ত্রী ও ছোট পুত্র আবু হানিফ ছোটন জানায়, তার আব্বু ও ভাইয়েরা কেউ বাড়িতে নাই। বাদী এবং সাক্ষী আবুল হোসেন ও প্রতিবেশী অন্য সাক্ষীরা আসামিদের কর্মকাণ্ড দেখতে পান।
বাদী বাড়িতে নেই জেনে পুলিশ সদস্যরা ওসি সাহেবের নেতৃত্বে ঘর, রান্নাঘর, গোয়াল ঘর, বৈঠকখানায় খোঁজাখুঁজি করে কাউকে না পেয়ে বাদীর ছোট পুত্র আবু হানিফ ছোটনকে ১নং আসামির নির্দেশে ধরে নিয়ে যায়। ৩, ৪ ও ৫নং সাক্ষীরা বাদীর নিকটতম প্রতিবেশী তারা শিশু পুত্রকে ধরে নেওয়ার কারণে ‘পুলিশের পিছু পিছু যেতে থাকলে তাদের গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বাদীর শিশু পুত্র আবু হানিফ ছোটনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাক্ষীদের দারস্থ হয়ে তাকে ছাড়িয়া আনার জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালায়; কিন্তু বাদীর শিশুপুত্রকে পুলিশ কোথায় রেখেছে তার কোনো সন্ধান দেয়নি।
গত ১৮/০১/২০১৪ তারিখ ভোর অনুমান সাড়ে ৫টায় ভোমরা স্থলবন্দরের লাভলু স্কেলের সামনে মেইন রাস্তার উত্তর পাশে ফাঁকা জায়গায় ১নং আসামির উপস্থিতিতে তার নির্দেশে ও হুকুমে ২ ও ৩নং আসামি পিস্তল দিয়া বাদীর শিশুপুত্র আবু হানিফ ছোটনের বুকের বাম পাশে, ডান হাতের বাহুতে এবং বাম হাতের কনুইয়ে পরপর ৩টি গুলি করে।
বাদীর পুত্রকে গুলির পর সে জমিনে লুটিয়ে পড়ে। গুলির লাগার স্থান দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়তে থাকে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই বাদীর পুত্র ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। উপস্থিত আসামিরা বাদীর শিশুপুত্র আবু হানিফ ছোটনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে দেখে তাকে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে উঠায়। উপরোক্ত ঘটনা ১ ও ২নং সাক্ষীরা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন।
পুলিশ বাদীর শিশুপুত্রকে হত্যা করে তার লাশ পিকআপ ভ্যানে তুলে সদর হাসপাতালের চাতালে রাখে এবং ময়নাতদন্ত শেষ করে (১৮/০১/২০২৪) বিকাল অনুমান ৫টার সময় স্থানীয় মেম্বার জাকির হোসেনের কাছে বাদীর পুত্রের লাশ হস্তান্তর করে।
আসামিরা একই উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে নিরপরাধ শিশুপুত্রকে নির্দয়, নিষ্ঠুর, নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে।
উল্লেখ্য, ১নং আসামির নির্দেশ ছিল দেখামাত্র গুলি এবং পিটাইয়া হত্যা করলে কোনো মামলা হবে না। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তৎকালীন সময়ে (১৮/০১/২০১৪) মামলা করার কোনো সুযোগ ছিল না। বর্তমান পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় ন্যায়বিচারের জন্য আদালতে মামলা দাখিল করেন। মামলাটি এজাহার রূপে গণ্য করিতে মর্জি হয়।