সাফল্যের পথ ধরে বাংলাদেশ একদিন চাঁদেও যাবে

অর্থনীতি আন্তর্জাতিক ওকে নিউজ স্পেশাল জনপ্রতিনিধি প্রচ্ছদ বিনোদন ভ্রমণ মুক্তমত লাইফ স্টাইল সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

স্টাফ রিপোর্টার : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে টার্মিনালের উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, এটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আরেকটি পদক্ষেপ। এভাবে একের পর এক সাফল্যের পথ ধরে বাংলাদেশ একদিন চাঁদেও যাবে।

শনিবার দুপুর ১২টার কিছু পরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এলাকায় টার্মিনালের ‘সফট ওপেনিং’- অনুষ্ঠানে এর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০টার কিছু পরেই প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে উদ্বোধন অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। সেখানে শিশুরা নাচেগানে তাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় টার্মিনালের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। এ সময় টার্মিনালে যাত্রীদের কীভাবে সেবা দেয়া হবে তা প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতীকী একটি বোর্ডিং পাস দেন বিমানবন্দরের কর্মীরা। এরপর তিনি ইমিগ্রেশনে যান। ইমিগ্রেশন থেকে তিনি একে একে নিরাপত্তার ধাপগুলো পার হন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাপানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী মাসাহিরো কোমুরা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী সাইতো তেতসুও এ সময় উপস্থিত ছিলেন

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব। আমরা বিশ্বাস করি এবং সেভাবেই এটাকে তৈরি করতে চাচ্ছি। আমরা দেখেছি বিশ্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছু পরিবর্তন হয়। একসময় হংকং ছিল আন্তর্জাতিক হাব। এরপর সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড। এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি পূর্ব ও পশ্চিমের আকাশ পথের মধ্যবর্তী হওয়ায় এক সময় আমাদের কক্সবাজার বা হযরত শাহজালাল হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন হাব। দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে সরকার বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে লালমনিরহাটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রিফুয়েলিংয়ের জন্য এখানে সবাই আসবে। বাংলাদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করবে। আর কক্সবাজারে নামলে তো আমাদের দীর্ঘ বালুকাময় সি-বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। এভিয়েশন খাতের আরও উন্নতি হোক। অতীতে এ খাতে উন্নয়নের এত পদক্ষেপ কেউ নেয়নি। ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগই দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আরও নতুন কিছু বিমান (উড়োজাহাজ) কিনবো। এয়ারবাসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। তারা আমাদের কিছু ঋণও দেবে। আন্তঃজেলায় বিমান যোগাযোগের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আমার আছে। শাহজালালে ভবিষ্যতে যাত্রী বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন রানওয়ে করার পরিকল্পনাও তার সরকারের রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, কক্সবাজারে সমুদ্রের পানি ঘেঁষে বিমান ওঠানামা করবে সেটি তার প্রবল ইচ্ছা ছিল। সেভাবেই কক্সবাজারের রানওয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। করোনা মহামারি সত্ত্বেও শাহজালালে নির্মাণকাজ চলেছে। চার বছরের মধ্যে টার্মিনাল স্থাপন করেছি। জেড ফুয়েল যাতে সরাসরি শাহজালাল বিমানবন্দরে আসে, সে ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালটি একটি মাল্টিমোডাল পরিবহনব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যাতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে সক্ষম হয়। নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি-৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) এবং একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এছাড়া আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন। কাজেই রেলেও যাত্রীরাও স্টেশনে নেমে এই আন্ডার পাস দিয়েই কিন্তু চলে আসতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা ৮০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনালটা সম্পূর্ণ চালু হলে এর সক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী। তবে ভবিষ্যতে এটা প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

সিএএবি’র চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, নতুন টার্মিনালটি যাত্রীদের বিশ্বমানের সেবা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার জন্য। টার্মিনাল অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় ক্যালিব্রেশন এবং প্রস্তুতির কারণে এই সময়ের প্রয়োজন হবে। আংশিক উদ্বোধনের পর থেকেই তৃতীয় টার্মিনালের নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারবে এয়ারলাইনসগুলো। পুরনো দু’টি টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি উড়োজাহাজ রাখা যায়। পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে একসঙ্গে মোট ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুইস এয়ার, এয়ার কানাডা ও এয়ার ফ্রান্সসহ অন্তত ১৫টি নতুন বিদেশি এয়ারলাইনস ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

নতুন টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ক্যান্টিন, ডিউটি ফ্রি শপ ও বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে দু’টি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে। এবং এটি উড্ডয়ন বা অবতরণের জন্য অন্যান্য উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে পারে। টার্মিনালটির তিন হাজার ৬৫০ বর্গমিটার এলাকা থাকবে ভিআইপি যাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য। শাহজালাল বিমানবন্দরের দু’টি টার্মিনাল বর্তমানে ৩০টি এয়ারলাইনসের প্রায় ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার যাত্রীকে পরিষেবা দেয়। বর্তমানে যাত্রীদের বিমানবন্দরে ম্যানুয়াল সিকিউরিটি চেক করা হয়। এটি ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা চেকের মাধ্যমে পরিবর্তন করা হবে। যাত্রীরা বিমানে না ওঠা পর্যন্ত স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে।

উল্লেখ্য, প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। এবং বাকি ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ পেতে যাচ্ছে জাপান। এর নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিৎসুবিশি, ফুজিটা ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে শাহজালাল এর তৃতীয় টার্মিনাল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী সাধারণের জন্য পুরোপুরি ব্যবহারের উপযোগী হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন : স্বপ্নের ধারণাও বদলে দিলেন সাকিব আল হাসানরা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *