সিলেটে আলোচনায় অপরাজেয় ছয় কাউন্সিলর

জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রচ্ছদ রাজনীতি সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

সিলেট অফিস: সিলেট নগরীজুড়ে আলোচনায় রয়েছেন ছয় অপরাজেয় কাউন্সিলর। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এর প্রথম নির্বাচন ২০০৩ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ের মুখ দেখেছেন তারা। সর্বশেষ গত ২১ জুনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা পাঁচ মেয়াদে জয়লাভ করে এমনই এক বিরল কীর্তির অধিকারী হয়েছেন নগরীর এই ছয় কাউন্সিলর।

সিসিকের টানা পাঁচবারের মতো নির্বাচিত কাউন্সিলর হয়ে রেকর্ড গড়লেন- ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বহিষ্কৃত ফরহাদ চৌধুরী শামীম। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পঞ্চমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মখলিছুর রহমান কামরান। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে পঞ্চমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মো. সিকন্দর আলী। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে টানা ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শান্তনু দত্ত শন্তু‘। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পঞ্চমবারের মতো জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। সংরক্ষিত ৬নম্বর ওয়ার্ডে টানা জয়ের রেকর্ড গড়েছেন নারী কাউন্সিলর মহানগর মহিলা লীগের সভানেত্রী শাহানারা বেগম।

টানা পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে যেন আরও একধাপ এগিয়ে আছেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) পঞ্চমবারের মতো এবং এর আগে সিলেট পৌরসভা থাকাকালীন সময়ে একবার পৌর কমিশনার (কাউন্সিলর পদকে কমিশনার বলা হতো) ছিলেন।

১৯৯৫ সালে পৌরসভা থাকাকালীন সময়ে প্রথম কমিশনার নির্বাচনে প্রার্থী হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শান্তনু দত্ত শন্তু। এরপর পৌরসভা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে তিনি ২০০৩, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

গত দুই নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেক আগে থেকেই তৎপর ছিলেন আজাদুর রহমান। এর অংশ হিসেবে তারা পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়ে প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে দুইবারই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে মেয়র পদে না দাঁড়িয়ে কাউন্সিলর পদ থেকেই নির্বাচন করেন। নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পরপর পাঁচবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের রেকর্ড তার দখলে। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে আজাদের কোনও প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এবার আজাদুর রহমান লাটিম প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ১’শ ৩৯ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মখলিছুর রহমান কামরানও ৯নং ওয়ার্ডের বারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। ২০০৩ সাল থেকে শুরু করে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৫টি নির্বাচনে তিনিও টানা জয়লাভ করে চলছেন। এবার ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মখলিছুর রহমান কামরান ৪ হাজার ৯’শ ৫০ ভোট পেয়ে স্বপদে ফের নির্বাচিত হয়েছেন।

বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মো. সিকন্দর আলী এবারও সিসিকের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছে। তিনিও সিসিকের প্রথম নির্বাচন ২০০৩ সাল থেকে টানা জয় করে ওয়ার্ডবাসীকে তাক লাগিয়েছেন।

সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছেন তিনি। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ চৌধুরী শামীমও লাটিম প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ১’শ ১৮ ভোট পেয়ে টানা পাঁচবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার কীর্তিতে শামিল হন।

সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড ৬ থেকে এবারও বিজয়ী হয়ে টানা পাঁচবারের রেকর্ড গড়লেন শাহানারা বেগম। তিনি বই প্রতীকে ৯ হাজার ৭’শ ৫০ ভোট পেয়েছেন।

এর আগে বুধবার (২১ জুন) লক্ষাধিক ভোট পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে সিলেটের নতুন নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯’শ ৯১। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের নজরুলল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮’শ ৬২ ভোট।
হতে চেয়েছিলেন মেয়র, হারলেন কাউন্সিলর পদেও।

এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ সেলিম। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হন তিনি। তবে নির্বাচনে হারতে হয় সেলিমকে। ছালেহ আহমদ সেলিম ২২ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং সিলেট ল’ কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি।

এবারের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন দলটির ১১ নেতা। এদের মধ্যে সেলিমও ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। মনোনয়ন পেয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচনে বিজয়ীও হন।

আরো পড়ুন : অহংকার আর ইগো এভাবেই শেষ করে দেয় একটি সাজানো গোছানো সংসার

কাওছার আহমদ

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *