সিলেটে নদ-নদীর পানি বেড়েছে, আতংকে নিন্মাঞ্চলের বাসিন্দারা

ওকে নিউজ স্পেশাল জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

সিলেট অফিস: মুষলধারে বৃষ্টি ও বাংলাদেশের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটের নদ-নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শুন্য দশমিক ৪৮ সে.মি. বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদীগুলোর পানিও বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। এতে আতংকের মধ্যে রয়েছেন নিন্মাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, সিলেটের প্রধান দুই নদী সরমা ও কুশিয়ারা। সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৩.২৩ সে.মি। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১২.৭৫ সে.মি.। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৩১ সে.মি। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১০.৮০ সি.মি। কুশিয়ারা নদীতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জকিগঞ্জের অমলসিদে কুশিয়ারায় রেকর্ড করা হয় ১৪.৩৯ সে.মি.। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১৫.৪০ সে.মি.। কুশিয়ারার পানি বিয়ানীবাজার শেওলা পয়েন্টেও বেড়েছে। বিকেল ৩ টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৭১ সে.মি.। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১৩.০৫ সে.মি.। কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও বেড়েছে। এ পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৫৭ সে.মি.। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ৯.৪৫ সে.মি.। জৈন্তাপুর সারী নদীতেও পানি বেড়েছে। এ নদীর সারীঘাট পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৬০ সে.মি.। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১২.৩৫ সে.মি.। কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীতে পানি বেড়েছে। এ নদীর ইসলামপুর পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১০.১৮ সে.মি.।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার ভোর ৬ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১১২.০ মি.মি.। এরপর সোমবার ভোর ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ৬ ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১১২.২ মি.মি.। এছাড়া প্রতিবছর জুন মাসে সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ৮১৮.৪ মি.মি.। কিন্তু এবছর বৃষ্টিপাত তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। এ বছর জুনের ১৯ তারিখ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় ১০৮৫.৯ মি.মি.।

সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিতাংশ ও জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত সিলেট নগরীর ঘাসিটুলা, কানিশাইল, কুশিঘাট ও সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকা মোহাম্মদপুর, সৈয়দপুর, জাহানপুর, টেক্সটাইল রোড, মইয়ারচর, কুচাই, বদিকোণা সহ বেশ কয়েকটি এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যায়।

এছাড়া নগরীর বাইরে সীমান্ত ও হাওর বেষ্টিত এলাকা কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার নিন্মাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কানাইঘাট উপজেলার ১ নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন, ২ নং লক্ষী প্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন, ৪ নং সাতবাঁক ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নিন্মাঞ্চল সহ বেশ কয়েকটি এলাকা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এতে অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কানাইঘাট উপজেলার মুলাগুলের বাসিন্দা ফখরুল আলম বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় গ্রামের ভিতরে বন্যার পানি ঢুকেছে।
সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা ইকবাল আহমদ বলেন, টেক্সটাইল রোডের বিভিন্ন জায়গায় কোমর সমান পানি রয়েছে। পানিতে ডুবে থাকার কারণে সকাল থেকে এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করছেনা। এছাড়া জাহানপুর, সৈয়দুপুর ও মোহাম্মদপুরের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। রাত পোহালই ২১ জুন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। এভাবে বৃষ্টি হলে এ এলাকার অধিকাংশ বাসা বাড়ি পানিতে ডুবে যাবে। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসা কঠিন হবে।

আলুর তলের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাদিক মিয়া জানান, বৃষ্টি আর বন্যার পানির কারণে ব্যবসা একেবারে মাটি হয়ে গেছে। পানির মধ্যে কষ্ট করে দোকান খুললে ক্রেতা পাওয়া যায়না।
সৈয়দপুর আবাসিক এলাকার সৈয়দ জাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তার বলেন, ব্যিালয়ের চারদিকে পানি রয়েছে। রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো আসতে পারছেনা। এ স্কুুলে ভোটকেন্দ্রও রয়েছে। এভাবে বৃষ্টি হলে স্কুলের ভিতরে যদি পানি ঢুকে তাহলে কেন্দ্র রাখা মুশকিল হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদির জানান, বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোন সেন্টারে যদি পানি উঠে যায় তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটি উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা আছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কাওছার আহমদ

আরো পড়ুন : কালীগঞ্জে সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *