সিলেটে নৌকার কান্ডারিদের ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র নেতারা

জনপ্রতিনিধি জাতীয় নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

কাওসার আহমদ, সিলেট: সিলেটে জমে উঠছে নির্বাচনি মাঠ। বিভাগের ১৯ আসনের বেশির ভাগেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের ‘ডামি’ প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেওয়া নেতারাই এখন ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নৌকার কান্ডারিদের।

বিভাগের চার মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে তিনজনের আসনে দলীয় কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় মোটামুটি নির্ভার রয়েছেন তাঁরা। আর দুজনকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে দলের ডামি প্রার্থীর। এ ছাড়া ডামি প্রার্থীর জন্য সাবেক এক মন্ত্রীকেও কঠিন অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।

সিলেট-৪ আসনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবারও নৌকার টিকিট পেয়েছেন। তাঁর আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন আরও সাত নেতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনোনয়নবঞ্চিত সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ইমরান আহমদ। আসনটিতে ইমরান আহমদ ছাড়াও মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটের মো. নাজিম উদ্দিন কামরান ও জাকের পার্টির মো. আলী আকবরের। এ আসনে জনপ্রিয় কোনো প্রার্থী না থাকায় ইমরান আহমদের বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। এ আসন থেকেও আওয়ামী লীগের কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। আসনটিতে যেসব প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পার্টির আহমদ রিয়াজ, তৃণমূল বিএনপির মো. আনোয়ার হোসেন, আঞ্জুমানে আল ইসলাহর মো. ময়নুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র ফারুক আহমদ। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় শাহাব উদ্দিনও আছেন অনেকটা নির্ভার। সুনামগঞ্জ-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও রয়েছেন নির্ভার। মনোনয়ন না পেলে আসনটি থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুস সামাদ ডনের। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত হলেও তিনি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। ফলে ডামিযন্ত্রণায় পড়তে হয়নি পরিকল্পনামন্ত্রীকে। ওই আসন থেকে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মাওলানা শাহীনুর পাশা, জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির তৌফিক এলাহী ও তালুকদার মো. মকবুল হোসেন। মন্ত্রীদের মধ্যে দলের ডামি প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হচ্ছে সিলেট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। দলের ডামি প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সিলেট-৬ আসনে দলের ডামি প্রার্থী নিয়ে বেশ বেকায়দায় রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও দুবারের মন্ত্রী হয়েও এলাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে না পারায় জন-অসন্তোষের বিষয়টি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন সরওয়ার। এ ছাড়া আসনটি থেকে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। ভোটের মাঠে এখনো শমসের মবিন খুব বেশি ভালো অবস্থানে না থাকলেও শেষ পর্যন্ত চমক দেখাতে পারেন- এমন আলোচনাও রয়েছে। সিলেট বিভাগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেকায়দায় রয়েছেন হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাহবুব আলীর সব হিসাবনিকাশ পাল্টে দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যারিস্টার সুমন যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই হাজারো মানুষের সম্মিলন ঘটছে। আসনটিতে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও ব্যারিস্টার সুমনের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগাম আভাস মিলছে। এ ছাড়া আসনটি থেকে প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের আল আমিন, ইসলামী ঐক্যজোটের আবু সালেহ, জাতীয় পার্টির আহাদ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. মুখলেছুর রহমান, জাকের পার্টির সৈয়দ আবুল খায়ের, ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের মো. আবদুল মুমিন ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রাশিদুল ইসলাম খোকন।

আরো পড়ুন : হলফনামায় তথ্যানুযায়ী প্রার্থীদের কার কত সম্পদ

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *