স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে : সিলেটে বালু লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নেমেছে পুলিশ। প্রায় প্রতিদিনই অভিযানে করা হচ্ছে জরিমানা। এরপরও হচ্ছে না বালু লুট বন্ধ। দিনে বন্ধ রাখলেও রাতের আঁধারে বালু লুটের মহোৎসব চলছে। পাশাপাশি বালু লুটপাট নিয়ে কোথাও কোথাও বালুখেকোদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে স্থানীয়রা। সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) থেকে অবৈধভাবে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন। এতে করে হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার পরিবেশ। এ নিয়ে শঙ্কায় এলাকার মানুষও। ইসিএভুক্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে গতকাল অভিযান চালায় টাস্কফোর্স। এ সময় ৫টি বালুবাহী নৌকা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া এসব নৌকাগুলোকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকাল দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান চালায়। গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন অভিযান শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাফলংয়ের ইসিএ এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম, বিজিবি ও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের অংশগ্রহণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৫টি বালুবাহী নৌকা আটক করে মামলা দেয়া হয়। এ ছাড়া এসব নৌকার পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরিবেশ রক্ষায় এমন অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হবে বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাফলং দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোর একটি। কিন্তু এই পর্যটন কেন্দ্র এখন পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাথর কোয়ারিতে। অনিয়ন্ত্রিত পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটনকেন্দ্রটির সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে পরিবেশও। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি জাফলংকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এর আগে পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জাফলংকে ইসিএ ঘোষণার নির্দেশনা দেন আদালত। ইসিএ ঘোষণার পর জাফলং থেকে সব ধরনের বালু ও পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একটি গোষ্ঠী বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জাফলংয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে- সিলেট শহরতলীর মোগলগাঁও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে সুরমা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে একজনকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযানে এ দণ্ড প্রদান করা হয়। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সম্রাট হোসেন এ আদালত পরিচালনা করেন। সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরীন আক্তার অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে জালালাবাদ থানার একদল পুলিশ সহযোগিতা করে। এ সময় স্থানীয় ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান ও সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, কোম্পানীগঞ্জের ঢালার পাড় এলাকায় একটি বৈধ বালু মহাল রয়েছে। ওই বালু মহালে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্নস্থানেও লুটপাটকারীরা বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার উপজেলার কলাবাড়ী এলাকায় ধলাই তীরে বালু উত্তোলনের জের ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত দু’জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, যুবলীগ নেতা আলীম উদ্দিন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাহাব উদ্দিন এবং তার স্বজন রাসেল গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। রাসেল ও তার লোকজন বিরোধপূর্ণ বালুমহালে বালু উত্তোলন করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। উপস্থিত স্থানীয়রা উভয়কেই সংযত হওয়ার পরামর্শে আপস মীমাংসার প্রস্তাব দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় পরদিন আধিপত্য বিস্তারে উভয় গ্রুপের লোকজন মুখোমুখি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। এর আগে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার নলুয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানের পাশে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় অতর্কিত হামলায় মহিলাসহ আহত হয়েছেন ৪ জন। এ ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
আরো পড়ুন : ডলার সংকটের কারণে স্টুডেন্ট ফাইল বন্ধ, টাকা যাচ্ছে হুন্ডিতে