প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া। ভিডিও ভাইরাল। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু অস্ত্রধারীরা। বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ আতঙ্কে উৎকণ্ঠিত শুধু ভোটাররাই নন, প্রার্থীরাও। গতকাল সিলেটে মতবিনিময়কালে সিইসি’র কাছে এ আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন প্রার্থীরা। প্রথমে হামলায় যুবককে নির্যাতন এবং পরে সশস্ত্র মহড়া- কোনোটিরই আইনগত উদ্যোগ নিচ্ছিলো না পুলিশ। নজর এড়ায়নি সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদেরের। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাঈদ মো. আব্দুল্লাহ নির্বাচন কমিশনে যে অভিযোগ দিয়েছিলেন; সেটিই আমলে নিলো কমিশন। বৃহস্পতিবার রাতে সিইসি’র সিলেটে অবস্থানকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের নোট পাঠালেন সিলেটের পুলিশ কমিশনার ইলিয়াস শরীফের কাছে।
ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানালেন। নোট পেয়ে পুলিশ সরব হয়। রাতেই এয়ারপোর্ট থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। বাদী কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ আব্দুল্লাহ। প্রধান আসামি আরেক প্রার্থী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর সভাপতি আফতাব হোসেন খানসহ ২০/২২ জন। রাতে অস্ত্রধারীদের খোঁজে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ভোরে নগরের বনকলাপাড়া ও হাজীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ৩ জনকে। এর মধ্যে অস্ত্রধারীকে বহনকারী মোটরসাইকেল চালকও রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বনকলাপাড়া এলাকার আতিকুর রহমান, জুবের আহমদ ও হাজীপাড়া এলাকার নুরুজ্জামান। গত শুক্রবার রাতে মামলা দায়েরের পর কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানকে ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। মামলার বাদী ও কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মো. আব্দুল্লাহ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তার বাসার সামনে যারা এসেছিলেন তাদের অনেকেরই কাছে অস্ত্র ছিল। তবে তুহিন নামের এক যুবক অস্ত্র প্রদর্শন করেছিল। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ এখনো প্রদর্শিত আগ্নেয়াস্ত্র ও চিহ্নিত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ কারণে এলাকায় ভীতির পরিবেশ বিরাজ করছে। আতঙ্কের কারণে তিনি নিজেও প্রচারণা থেকে বিরত রয়েছেন বলে জানান।
এদিকে পুলিশের তৎপরতা শুরু হওয়ার পর থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার-প্রচারণা কিছুটা কমেছে। বহিরাগতদের আনাগোনা নেই। গত ৫ই জুন নগরের ৭নং ওয়ার্ডের জালালাবাদ আবাসিক এলাকায় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক শাহনূরকে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় শাহনূরের পা ভেঙে গেছে। তিনি বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের সমর্থক। এ ঘটনার পরদিন ভোরে নগরীর নূরানী দীঘির পাড়ের কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মো. আব্দুল্লাহ’র বাসার সামনে গিয়ে অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খান ও তার সহযোগীরা। পরবর্তীতে অস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর সিলেটের ভোটের মাঠে আতঙ্ক দেখা দেয়।
তবে কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খান শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, ‘৫ই জুন রাতে জালালাবাদ এলাকায় তার কর্মী শাহনূরকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা মহড়া দিয়ে হামলা করেছে। এ ঘটনায় শাহনূর এখনো হাসপাতালে রয়েছে। শাহনূরের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মো. আব্দুল্লাহ জড়িত। এ ব্যাপারে শাহনূরের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াত শিবিরের প্রার্থী সাঈদ আব্দুল্লাহ কয়েক বছর ধরে প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু এলাকার মানুষ তাকে ভোট দেন না। এবার নাটক সাজাতে সাঈদ আব্দুল্লাহ বহিরাগত জামায়াত ও শিবির ক্যাডারকে এলাকায় এনে হামলা করিয়েছে। তিনি সাঈদ আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।’ এদিকে হামলা, অস্ত্রের মহড়ার পর পুলিশি তৎপরতায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকায় পুলিশ টহল রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে ৭নং ওয়ার্ড এলাকা নীরব হয়ে পড়েছে। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত পুলিশ প্রদর্শিত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেপ্তার হওয়া ৩ জনকে অস্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এয়ারপোর্ট থানার ওসি মো. মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রদর্শিত অস্ত্র উদ্ধার এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে শাহনূরের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি বলে জানান তিনি।
আরো পড়ুন : মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সিরাজুল আলম খান