নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেট জেলা বিএনপির আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদের প্রার্থিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের কুমারপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ১০০ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরিফুল লিখিত বক্তৃতায় জানান, বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় তিনি সভাপতির পদ থেকে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ও আপসহীনভাবে কমান্ড মেনে চলার দৃঢ়তা আমার পাথেয়। সারা দেশে যখন বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল গঠনে দিনরাত অতিবাহিত করছে, তখন গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতা হরণকারী ফ্যাসিস্ট বাকশালি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াইয়ে শামিল থাকা এক খাঁটি বিএনপি কর্মী হিসেবে আমি সভাপতি নির্বাচন করতে সিদ্ধান্ত নিই।’
মেয়র লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ‘মাত্র এক সপ্তাহের পদচারণে সিলেট জেলার ১৮টি সাংগঠনিক অঞ্চলে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি করতে সক্ষম হই। এমতাবস্থায় তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মী যেভাবে আমার প্রতি সাড়া দিয়েছেন, তা এককথায় বর্ণনা দিলে শুধু বলতে হয়, অপূর্ব! আজ বিএনপি কর্মী ও জনতার জন্য সারা জীবন উৎসর্গ করে দিলাম।’
এর আগে গতকাল সোমবার জেলা বিএনপির সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে জেলার ১৮টি সাংগঠনিক অঞ্চলের ১ হাজার ৮১৮ জন কাউন্সিলরের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচন করার কথা ছিল। তবে সম্মেলনের এক দিন আগে গত রোববার হঠাৎ করেই কেন্দ্র থেকে সম্মেলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, সম্মেলন উপলক্ষে কাউন্সিলরদের তালিকা তৈরিতে ‘অনিয়ম’ হয়েছে জানিয়ে এ তালিকা যাচাইয়ের জন্য সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্র থেকে রোববার জেলা আহ্বায়ক কমিটিকে জানানো হয়। ভোটার তালিকা সময়মতো প্রকাশ না করা এবং কাউন্সিলরদের তালিকা যাচাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপি সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। এ কমিটির ২৭ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের কথা আছে।
পরে গতকাল সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির এক জরুরি সভা থেকে চলতি মাসের শেষ তিন দিনের মধ্যে যেকোনো এক দিন সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি এ-ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ইচ্ছা করলে কোনো প্রার্থী আজ বেলা পাঁচটার মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে পারবেন। যদিও এর আগে ১৭ মার্চ যাচাই-বাছাই শেষে সভাপতি পদে তিনজন প্রার্থীর সবাইকে বৈধ ঘোষণা করেছে বিএনপির নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি। ওই দিনই ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এখন দলের বড় একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। দল ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কমিটির বেশির ভাগ নেতা তাঁর বলয়ের। এর বাইরে আরেকটি অংশের নেতৃত্বে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মুক্তাদিরের আধিপত্য কমাতেই আরিফুল জেলা বিএনপির সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।
একই সূত্রের তথ্যানুযায়ী, আরিফুল ছাড়াও সভাপতি পদে আরও দুজন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন মুক্তাদির বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত ও বিগত কমিটির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম এবং বিএনপির ‘নিখোঁজ’ নেতা এম ইলিয়াস আলীর বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। তবে আরিফুল প্রার্থী হওয়ার পরপরই দলের বহুধাবিভক্ত স্থানীয় রাজনীতিতে মূলত উত্তাপ ছড়ায়। আরিফুলের জয়ের ব্যাপারেও অনেকেই আশাবাদী হয়ে ওঠেন। এরপর আরিফুলকে ঠেকাতে শুরু হয় তাঁর প্রতিপক্ষ নেতাদের নানামুখী তৎপরতা। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের চাপেই আরিফুল প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বেলা একটার দিকে যোগাযোগ করা হলে আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দলীয় রাজনীতি করি। দলের প্রতি সব সময়ই আমি আস্থাশীল ও নিবেদিতপ্রাণ। দলের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনাতেই আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এর বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’