চট্টগ্রাম ব্যুরো: কারও বিয়ে হয়েছে মাত্র পাঁচ মাস। হাতে মেহেদীর রং মুছে যাওয়ার আগেই হারিয়েছেন প্রিয়জনকে। আবার কেউ এসেছেন কোলে দুধের বাচ্চা নিয়ে। সন্তানকে চোখের দেখা দেখার আগে পাড়ি দিয়েছেন ওপারে। অনেকে এখনও তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেননি। সোমবার তবুও তারা আসেন চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে ক্ষতিপূরণের চেক নিতে।
সবার চোখে ছিল অশ্রু। বুকে শোক। কেউ কেউ হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের জন্য কাঁদেন বিলাপ ধরে। কেউবা অশ্রু লুকিয়ে রাখেন আনমনে। যে সন্তান চলে গেছে, তাকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না কোনো দিন। এ সত্যটি তারা জানেন। তবুও আসেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতটাকে একটু নতুন রূপ দিতে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় সোমবার হতাহত ৬৯ জনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে আসা স্বজনদের দেখে তাদের কষ্ট বর্ণনা করার মতো ছিল না।
বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ এ চেক বিতরণ করেছে। হতাহতদের পরিবারের মধ্যে এ চেক তুলে দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের নিখোঁজ তিনজনসহ ১৩ পরিবারকে ১৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। আর নিহত অন্য ১৩ পরিবারকে ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। এছাড়া আহত ৪৩ জনের পরিবারকে আহত হওয়ার মাত্রা অনুযায়ী দুই লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।
ক্ষতিপূরণের চেক হাতে নিয়েই রিশা মনি বলেন, এই চেক দিয়ে আমার আর কী হবে, স্বামীকে তো আর ফিরে পাব না কোনো দিন। রিশা মনির বিয়ে হয়েছে মাত্র পাঁচ মাস আগে। হাতে মেহেদীর রঙ মোছার আগেই হারিয়ে ফেলেছেন স্বামী ফরিদুজ্জামানকে। তার স্বামী ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। আগুন নেভাতে গিয়ে নিভিয়ে ফেলেছেন তার জীবন প্রদীপ। এখনও তার মরদেহ শনাক্ত হয়নি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক আজিজুর রহমান ও শফিকুর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কবির, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারে যদি কেউ কর্মক্ষম থাকেন, তাহলে তাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ। আর কর্মক্ষম কেউ না থাকলে, তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবেন, যাতে তারা চলতে পারেন। এছাড়া যারা আহত হয়ে অক্ষম হয়েছেন, তাদের পরিবারের কাউকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
গত ৪ জুন রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে এ পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এখনও চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এ ঘটনার ৮৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
আরো পড়ুন: বর্তমানে বিশ্বের প্রতি ১১৩ জন মানুষের মধ্যে একজন শরণার্থী