সুনামগঞ্জে শোকের মাতম, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানি

জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মতো বাড়ির কাজ করছিলেন সিরাজ নূর। বেলা ১১টার দিকে ছেলে সৌরভের এক সহকর্মীর ফোন আসে। ফোন ধরতেই বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি। মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। ফোন হাতে নিয়ে তার অসহায় অবস্থা দেখে পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিপদের আঁচ করেন। এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে সিরাজ নূর বললেন, ‘আমার ছেলে আর নেই।’

এরপর থেকে বাড়ির উঠানে ছেলের মরদেহের অপেক্ষায় একটানা বিলাপ করছিলেন তিনি। কেউই সামলাতে পারছিলেন না তাকে। বিকেলের দিকে গলার স্বর আর বের হচ্ছিল না তার। কেবলই বুক চাপড়াচ্ছিলেন। অবশেষে বিকেল ৫টার পর ছেলে সৌরভের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স আসে। মরদেহ নামানোর পর পরম মমতায় তিনি দেখছিলেন ছেলের মুখ। এসময় উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

এমন দৃশ্য শুধু ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ নূরের পরিবারের নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সব পরিবারের। সুনামগঞ্জে মর্মান্তিক ওই সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ বা হারিয়েছেন ছেলেকে। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে, সবার চোখেই জল।

জানা যায়, সিরাজ নূরের ৪ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে সৌরভ ছিল তৃতীয়। সংসারের হাল ধরতে মাস খানেক আগে ঢালাই শ্রমিকের কাজ নিয়ে সিলেটে যায় সে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সামিন নূর বলেন, সৌরভ ও তার ভাইয়েরা কৃষিকাজ এবং হাঁস পালন করে পরিবার চালাত। তবে, শুধু কৃষিকাজ করে পরিবারের খোরাকি না হওয়ায় সিলেটে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় মাস খানেক হলো সে সিলেটে গেছে।

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের ভাটিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুল আলম চৌধুরী মিফতাহ বলেন, ভাড়া বাঁচাতে নির্মাণ শ্রমিকদের নেওয়া হয় পিকআপে। জনপ্রতি এক হাজার টাকা বাঁচাতে মৃত্যুমুখে তুলে দেওয়া হয় তাদের। এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে মর্মাহত। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ ছিলেন। এখন তাদের ছেলেমেয়ের কী হবে। আমি সরকারসহ সকলকে পরিবারগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বললেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে দৃষ্টি দিতে হবে। এছাড়াও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।

চেয়ারম্যান বদরুল আলম চৌধুরী মিফতাহ বলেন, মরদেহ বহনের জন্য সরকার ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছে। এছাড়াও ঘটনার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা, আহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছেন।

এর আগে বুধবার সকাল ছয়টার দিকে সিলেটের নাজিরবাজারে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৪ জন নিহত হন। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন।

আরো পড়ুন : ইয়াবাসহ ইউপি সদস্যের ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে ঝালকাঠি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *