স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য মিরপুরে যা অভাবিত

খেলাধুলা প্রচ্ছদ

ক্যারি করা ব্যাটার দিনের শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন না, সে তিনি নাইটওয়াচম্যান হলেও। কিন্তু গতকাল মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ব্রিফিংয়ে হাজির কাসুন রাজিথা, আজ অধিনায়ক করুনারত্নের সঙ্গে যাঁকে ব্যাট হাতে নামতে হবে। এসেছেন ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির আনন্দে। সঙ্গে আসিথা ফার্নান্ডো এলে আরো মানাত।

একটি রান আউট বাদ দিলে দারুণ কিছুর সম্ভাবনা জাগানো বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংসের বাকি ৯ উইকেটই তো দুই লঙ্কান পেসারের। স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য মিরপুরে যা অভাবিত।

চট্টগ্রামের মরা উইকেটে কিংবা মিরপুরে সফরকারী দলের পেসারদের অপ্রত্যাশিত সাফল্য দেখে বাংলাদেশ অধিনায়ক মমিনুল হকের আক্ষেপ হওয়ার কথা। চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিলেন ‘কনকাশন সাব’ রাজিথা। ঢাকায় মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের বীরত্বগাথার পরও বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসকে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে দেননি রাজিথা ও ফার্নান্ডো। অথচ চট্টগ্রাম থেকে গতকাল ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের পেসারদের মধ্য থেকে একটাই উইকেট পেয়েছেন এবাদত হোসেন। গতকাল এ নিয়ে দুঃখও ঝরেছে লিটনের কণ্ঠে, ‘পেস বোলারদের জন্য উইকেটে সহায়তা আগের দিন ছিল, আজকেও (গতকাল) ছিল। আমার মনে হয়, আমাদের ফ্রন্ট লাইনে যে দুজন বোলার (পেসার) আছে, তাদের আরেকটু দায়িত্বশীল হতে হবে। কিছু উইকেট নিতে না পারলে রান আটকাতে হবে। ’ চট্টগ্রামে সেটি হয়নি, ঢাকার সহায়ক উইকেটেও পারছেন না এবাদত কিংবা খালেদ আহমেদ। অথচ স্রেফ শৃঙ্খলা আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কন্ডিশনের সামান্য সুবিধা কী দারুণভাবেই না কাজে লাগিয়েছেন রাজিথা ও ফার্নান্ডো।

এবাদত ও খালেদ যদি সেই শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন, তবে প্রতিপক্ষকে দ্বিগুণ উৎসাহে চেপে ধরার সুযোগ পেতেন সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। লিটন আশা করছেন, ‘এখনো তারা (শ্রীলঙ্কা) পিছিয়ে আছে অনেক দূর। মিরপুরের উইকেট এমন যে সকালে একটি-দুটি উইকেট দ্রুত নিতে পারলে অনেকখানি চান্স থাকবে। ’ এই ‘চান্স’টা তৈরি করতে হবে এবাদত কিংবা খালেদকে। উইকেট যতই ঝকঝকে দেখাক না কেন, প্রথম ইনিংসে লিড পেলে জয়ের সুবাস পেতে থাকবে বাংলাদেশ। আজ থেকে অবধারিতভাবে ভাঙতে শুরু করবে মিরপুরের উইকেট, পেসাররা একটু হাত বাড়ালে তীব্র সমালোচিত বিসিবির কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার বন্দনাও হবে তখন।

তবে আপাতত ঢাকা টেস্টের প্রথম দুটি দিনের বন্দনা ও বেদনা সেই দুজন—মুশফিক ও লিটনকে ঘিরে। প্রথমজন ধ্যানমগ্ন ব্যাটিং করে যাচ্ছেন সেই চট্টগ্রাম থেকে। ঝুঁকির মেদ নেই। রিভার্স সুইপ অবশ্য খেলেছেন গতকাল। তবে সেটি সময়ের দাবিই ছিল। অন্যজন, লিটনের ব্যাটিং দেখে মনে হবে রান করা বুঝি খুব সহজ। পরিবর্তন অবশ্য ঘটিয়েছেন নিজের ব্যাটিং চিন্তায়। দারুণ শুরুর পর বাজে সমাপ্তি ঘটিয়ে জীবনে কম সমালোচিত হননি লিটন। সেই তিনি এখন নিজের আয়েশি ব্যাটিংয়েও সতর্ক। হতে পারে অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ জুটি গড়ার পথে মুশফিকের স্থিরতার প্রভাব পড়েছে লিটনের মেজাজে। টেস্টে প্রায়ই জুটি বাঁধেন তাঁরা। এই জুটির ট্র্যাকরেকর্ড অবিশ্বাস্য! গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে ধরলে মুশফিক-লিটন জুটিতে তিনবার দুই শর বেশি রান পেয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিজে দীর্ঘ সময়ের সঙ্গীর প্রভাব পরোক্ষে স্বীকারও করে নিয়েছেন লিটন, ‘আমি জানি উনি (মুশফিক) কেমন খেলোয়াড়। আমি জানি তার সঙ্গে আমার কিভাবে খেলতে হবে। ’

গতকাল দিনের সপ্তম ওভারে সেই বোঝাপড়ায় যতি টেনেছেন কাসুন রাজিথা। তাঁর একটি লেন্থ বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন (১৪১)। ২৭২ রানের জুটি ভাঙার পর যা হয়, রাজিথার পরের ওভারে অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। এরপর উন্মুক্ত হয়ে পড়া বাংলাদেশের ভঙ্গুর টেলএন্ডারদের নিয়ে লড়ে গেছেন মুশফিক। চট্টগ্রামের পর ঢাকায়ও এই সময়টায় শর্ট বলের কার্যকারিতা দেখিয়েছেন আসিথা ফার্নান্ডো, তুলে নিয়েছেন তাইজুল ও খালেদকে। শেষ ব্যাটার এবাদত রান না করলেও মুশফিককে ২০ বল খেলে কিছুটা সময় সঙ্গ তো দিয়েছেন। বাংলাদেশের টেলএন্ড ব্যাটিংয়ে কিছু উন্নতির ইঙ্গিত এতে রয়েছে।

বাকিটা আক্ষেপের গল্প। মুশফিকের স্ট্রাইকিং এন্ডে ফেরার মরিয়া চেষ্টায় রান আউট হয়েছেন এবাদত। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন তাই অপরাজিত ১৭৫ রানে ভঙ্গ হয়েছে মুশফিকের। এরপর দুই দলের পেস বোলিংয়ে সাফল্যের ব্যবধান নিয়ে মমিনুল হকের আক্ষেপের কথা তো শুরুতেই বলা হয়েছে। বাকি আছে ক্যাচ মিস ও প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারকে ঘিরে বাংলাদেশ দলের অনিশ্চয়তার কথা। ৭৫ রান নিয়ে মমিনুলের উদ্বেগ হয়ে আজ আবার ব্যাট হাতে নামা লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে গতকাল দুইবার আউট হতে পারতেন। ব্যক্তিগত ৩৬ রানে এবাদতের আবেদন আম্পায়ার নাকচ করে দেওয়ার পর রিভিউ নিলে তখনই সাজঘরে ফিরতে হতো করুনারত্নেকে। আর ১ রান যোগ করার পর তাইজুলের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। বাংলাদেশের এই বাঁহাতি স্পিনারের সবচেয়ে বড় আক্ষেপের কারণ প্রযুক্তি। লঙ্কান ওপেনার ওসাডা ফার্নান্ডোর বিপক্ষে এলবিডাব্লিউর আবেদন অগ্রাহ্য হওয়ায় রিভিউ নিয়েছিলেন তাইজুল। কিন্তু ‘আম্পায়ার্স কল’ লঙ্কানদের পক্ষে যাওয়ায় ন্যায্য একটি উইকেট থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। এতে মুঠো গলে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে আবার প্রতিপক্ষের সামনে বাধার দেয়াল তুলে দিয়েছেন সাকিব, কুশল মেন্ডিসকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে।

দুটি উইকেট এবং আরো ২২২ রানে এগিয়ে থাকার সুবিধা বাংলাদেশের পক্ষে। যদিও বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস দৃষ্টিসীমার মধ্যে রেখে দ্রুতলয়ে রান তোলায় শ্রীলঙ্কাই আধিপত্য করেছে দ্বিতীয় দিনে। আজ প্রথম ঘণ্টা থেকে শুরু হবে ব্যবধান গড়ার লড়াই।

আরো পড়ুন : তারা স্বাধীনভাবে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ করুক; তারপরেও পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *