স্বপ্নের নাকি রঙ হয় না! কিন্তু সেই ধারণাও বদলে দিলেন সাকিব আল হাসানরা! বিশ্বকাপ শুরুর আগে ভেঙেচুরে পড়া একটি দল। তাদের নিয়ে বিশ্বকাপে ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বপ্নটাও হয়েছিল ধূসর। কিন্তু নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানদের হারিয়ে দিয়েছে হেসে খেলে। তাতেই ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে স্বপ্ন ডানা মেলেছে জয়ের উল্লাসে। পাহাড়কন্যা ধর্মশালা স্টেডিয়ামে টসে জিতে আফগানদের ব্যাটে পাঠিয়ে চমকে দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শঙ্কা ছিল পরে ব্যাট করতে নেমে আফগান স্পিন জুজুতে না মুখ ধুবড়ে পড়ে দল। কিন্তু শুরুতেই বোলাররাই জয়ের স্বপ্ন এঁকে দেন উইকেটে একের পর এক আঘাত হেনে। প্রতিপক্ষের দুই ওপেনার সাবলীল শুরু করলেও দলকে পথ দেখান অধিনায়ক। দুর্দান্ত বোলিংয়ে আফগানিস্তান গুটিয়ে যায় ১৫৬ রানে। ২৭ রানে দুই উইকেট হারালেও মেহেদী হাসান মিরাজ দেখান ব্যাটিং ম্যাজিক।
এবার মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে হাঁকান ফিফটি শেষ পর্যন্ত খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত, থাকেন ৫৯ রানে অপরাজিত। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ২০১৫ ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপেও আফগানদের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল টাইগাররা। অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে দলকে জয় এনে দেয়া মিরাজ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন এ ভাবে জিতবে তারাও ভাবেননি। বলেন, ‘আমরা এভাবে চিন্তা করিনি। কী হবে না হবে আমরা শুরুতে চিন্তা করিনি। আমরা যে জিনিসটা চিন্তা করেছি, আমরা বল টু বল খেলবো। যেটা বললেন অলরাউন্ডার পারফরম্যান্স আমি যদি বড় টুর্নামেন্টে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করতে পারি, এটা তো অবশ্যই আমার জন্য অনেক বড় অর্জন হবে এবং দলের জন্যও হবে। অবশ্যই এটা সবার স্বপ্ন থাকে।’
জয়ের লক্ষ্য ১৫৭ রান। খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু টাইগার ব্যাটিংয়ে ভরসা রাখা যে ভীষণ কঠিন। যে কোনো মুহূর্তে চাপে ধসে পড়তে পারে দল। যেখানে টাইগার স্পিনাররা দুর্র্দান্ত সেখানে রশিদ মুজিবরাতো আরও ভয়ঙ্করই হতে পারে। কিন্তু দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসকে আসলে আউট করতে হয়নি আফগান বোলারদের। পঞ্চম ওভারে দলীয় ১৯ রানে রানআউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ১৩ বলে ৫ রান করা তানজিদ। তাও নিজের ভুলে অদ্ভুত ভাবে রানআউট হয়। এরপর সপ্তম ওভারে প্যাভিলিয়নে তানজিদের সঙ্গী হন লিটন দাস। আফগানিস্তানের পেসার ফজল হক ফারুকির বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন। এতে প্রেসবক্ষে ভারতীয় এক সংবাদকর্মী বলেই ফেললেন- এভাবেও আউট হওয়া যায়! লিটন ২টি চারে ১৮ বলে করেন ১৩ রান। শঙ্কাটা তাহলে দেখাই দিলো ব্যাটিং ব্যর্থতার!
না, সেখান থেকে মিরাজ যেন নিজেদের দুর্ভাগ্যের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন। ২৭ রানে ২ ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে দল দেখালেন জয়ের স্বপ্ন। জুটি বাঁধেন শান্তকে নিয়ে। ফারুকির করা নবম ওভারের চতুর্থ বলে পয়েন্টে নজিবুল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রানে জীবন পান ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে খেলতে নামা মিরাজ। ১২তম ওভার করা পেসার নাভিন উল হকের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে আবারও জীবন পান মিরাজ। ডিপ থার্ডে মিরাজের ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি মুজিব। এবার ২৩ রানে জীবন পান তিনি। দু’বার জীবন পেয়ে শান্তর সঙ্গে ২৩তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডকে ছুঁয়ে দেন শতরানের সীমানা। ঐ ওভারেই ওয়ানডেতে তৃতীয় ফিফটি করেন ৫৮ বল খেলা মিরাজ। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের দু’টিতেই ফিফটি করেছিলেন তিনি। অবশ্য পরে ইনিংস বড় করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। নাভিনের বলে মিড অফে রহমতকে ক্যাচ দিলে ৫টি চারে ৭৩ বলে ৫৭ রান করা ডান হাতি ব্যাটারের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। সর্বশেষ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেনার হিসেবে নেমে ১১২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মিরাজ। তৃতীয় উইকেটে শান্ত-মিরাজ ১২৯ বলে ৯৭ রানের জুটি গড়েন।
মিরাজ যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৩৩ রান দূরে বাংলাদেশ। সাকিবকে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করার পথেই ছিলেন শান্ত। কিন্তু ৩৪তম ওভারে দলীয় ১৪৬ রানে ওমরজাইর বলে শিকার হয়ে জয় থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব। শান্ত-সাকিব জুটি ২২ রান যোগ করেন।
সাকিব ফেরার পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে প্রয়োজনীয় ১১ রান তুলে ৩৫তম ওভারেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন শান্ত। ৮০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অধর্শতকের দেখা পাওয়া শান্ত শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৩ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। আফগানিস্তানের ফারুকি-নাভিন ও ওমরজাই ১টি করে উইকেট নেন।
আরো পড়ুন : আফগানিস্তানে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ১২০ এবং ১০০০ জন