চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিহত ফায়ার সার্ভিস সদস্য ফায়ার ফাইটার মো. শাকিল আহম্মেদ তরফদার (২৩) তার মাকে হজ করতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি আগামী ঈদুল আজহায় গ্রামের বাড়িতে আসার কথাও বলেছিলেন মাকে। কিন্তু শাকিলের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। মাকে আর হজ করানো হলো না শাকিলের।
গতকাল সোমবার (৬ জুন )সকালে বটিয়াঘাটা উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরের সুখদাড়া গ্রামে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান নিহত শাকিলের বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের সুখদাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শাকিলের বাড়িতে শোকার্ত মানুষের ভিড়। নিহত শাকিলের মা, বাবা, ভাই আর স্বজনদের আহাজারিতে সুখদাড়া গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সান্ত্বনা জানাতে আসা সবার চোখ অশ্রুসিক্ত। তারা অপেক্ষা করছেন, কখন শাকিলের মরদেহ পৌঁছাবে বাড়িতে।
শাকিলের পিতা পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুস সাত্তার তরফদার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে তিনি শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। সারা বাড়িতে মানুষ। আব্দুস সাত্তার কান্নাভরা কণ্ঠে বলেন, শাকিল ২০১৮ সালে বটিয়াঘাটা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। পরে ২০১৯ সালের ২০ মে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেয়। ওরা তিন ভাই। শাকিল ছিল সবার ছোট। মেজো ভাই রিপন ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করে। এখন বটিয়াঘাটা ইউনিটে কর্মরত আছে।
তিনি জানান, বটিয়াঘাটা থানা থেকে শাকিলের বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে মনের মধ্যে সন্দেহ জাগে ওঠে। কী হয়েছে আমার শাকিলের? আমার শাকিল কী কোনো বড় বিপদে পড়েছে? অজানা আতঙ্ক ভর করে আমার বুকে। এরপর রবিবার সকালে জানতে পারি আগুনে পুড়ে আমার শাকিল মারা গেছে।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, শাকিলকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে পাত্রী দেখা চলছিল। দু-এক জনকে পছন্দও হয়েছিল। কিন্তু সব কিছু শেষ হয়ে গেল।
অচেতন অবস্থায় শাকিলের মা জেসমিন বেগমকে বারান্দায় ঘিরে ধরে বসেছিলেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা। ছেলে হারিয়ে তিনি বাক্রুদ্ধ হয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে জ্ঞান ফিরে এলে চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার শাকিল কই, তোমরা আমার শাকিলকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও’।
শাকিলের আত্মীয়স্বজনরা জানান, আগুন নেভাতে যাওয়ার আগে শাকিল তার মাকে ফোন করেছিলেন। সেই সময় মায়ের কাছে দোয়া চেয়েছিলেন।
আরো পড়ুন : জনশুমারি ও গৃহগণনা উপলক্ষে ১৪ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী