দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আধাবেলা হরতালের শেষভাগে এসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেন বাম জোটের কর্মীরা।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যখন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাবেন, ঠিক তখন পুলিশের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায় বাম জোটের নেতাকর্মীরা।
বাম জোটের নেতাকর্মীদের অবস্থানে পল্টন মোড়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। তখন পুলিশ সদস্যরা তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে ধ্বস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে বাম জোট নেতাকর্মীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। পুলিশ তাদের প্রতিহত করতে লাঠিচার্জ করে, গরম পানি নিক্ষেপ করে।
এতে বেশকজন নেতাকর্মী আহত হন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, হরতালে পুরানা পল্টন মোড়ে বিনা উস্কানিতে পুলিশি হামলায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতা আব্দুল করিম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাওন বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ রাকিব হাসান সুজন, ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি শাহরিয়ার ইব্রাহীম মিমো, সহ-সভাপতি সালমান রাহাত, মহিউদ্দিন রুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিজম ফকির, সদস্য আজিজুল হক আরমান, রাইসা আমিন স্নেহা, রাজবাড়ি জেলার সভাপতি কাওসার আহমেদ রিপন, ফরিদপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক শিতাংশু ভৌমিক অঙ্কুর আহত হয়েছেন।
হামলার নিন্দা জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল যৌথ বিবৃতিতে বলেন, হরতালের প্রতি জনগণের সমর্থনে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পেটোয়া বাহিনী সারাদেশে ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলা মামলা হুলিয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা যাবে না।
পরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের জানান, সোমবার ভোর ৬টা থেকে হরতাল শুরুর পর রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে বাম জোটের ৯ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। মোহাম্মদপুরে হামলা হয়েছে। পল্টনে বাম নেতাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়া হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ধরপাকড় চলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সারাদেশে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হলেও তাতে ‘ব্যাপক জনসমর্থন’ রয়েছে বলে দাবি করেন জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, ‘মানুষের আজ নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মানুষের পক্ষে একটা দিন কাজ বাদ দেওয়া কঠিন। তারা কাজে নেমেছেন। মালিকপক্ষ জোর করে বাস নামিয়েছে সড়কে। আজ রিকশাচালক, সিএনজি চালক ও পথচারী সবাই একযোগে বলেছেন, এই হরতালে তাদের সমর্থন রয়েছে। এই যে বিরাট সমর্থন, এটা সরকারের জন্য ভয়ের কারণ।’
বাম জোটের এই হরতালে বিএনপি নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে।
সাকি বলেন, ‘এই হরতাল আজ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নতুন সূচনা করল। প্রতিটি বিরোধী জোট এই হরতালে সমর্থন দিয়েছে। এই ঐক্য, আন্দোলন আরও সম্প্রসারিত করে ফ্যাসিবাদি দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। তবেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র নতুন যাত্রা শুরু করবে।’
সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের এই লড়াই গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আজকে শান্তিপূর্ণ হরতালে হামলার দায়দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিতে হবে, সরকারকে নিতে হবে। বিনা উসকানিতে হামলা হয়েছে আমাদের ওপর। এর প্রতিবাদে আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।’
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া সমকালকে জানান, বাম জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪-৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।