আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। অবরোধসহ নানান কর্মসূচি দিচ্ছে বিরোধী দলগুলো। নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার পর কর্মসূচি আরও তীব্র করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। ইতোমধ্যে রোববার ও সোমবার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যদিও ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার সময় বেঁধে দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তাই বাধ্য হয়ে নির্ধারিত সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করতে হচ্ছে। নির্ধারিত পরীক্ষা সূচি পরিবর্তন করে ছুটির দিনেও (শুক্রবার ও শনিবার) ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে শিক্ষার্থীরা দুই পরীক্ষার মধ্যে সময় পাচ্ছে কম। তাই পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপে তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত পরিবহণে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। বছর শেষে বার্ষিক পরীক্ষার সময় এ ধরনের ঘটনায় বিপাকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অভিভাবকরা বলছেন, এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় তারা। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়েই সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার ও সোমবার সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। রুটিন অনুযায়ী এই দুদিন যেসব পরীক্ষা ছিল, তা এগিয়ে এনেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলটির প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রোববার ও সোমবারের (১৯-২০ নভেম্বর) পরীক্ষা পরিবর্তন করে শুক্রবার ও আজ (শনিবার) (১৭ ও ১৮ নভেম্বর) নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৯ ও ২০ নভেম্বরের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের প্রথম শ্রেণির মূল্যায়ন ও অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা এবং মূল্যায়নের সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত সময়সূচি অনুয়ায়ী প্রথম ও নবম শ্রেণির ১৯ নভেম্বর সোমবারের সব পরীক্ষা শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম শ্রেণির পরীক্ষা এদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং নবম শ্রেণির পরীক্ষা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়।
অন্যদিকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির রোববারের (১৯ নভেম্বর) সব পরীক্ষা ১৮ নভেম্বর শনিবার নেওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পরীক্ষা সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষা দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত, অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবং নবম শ্রেণির পরীক্ষা দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা শুক্র ও শনিবার বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এটা করা হয়েছে। শুক্রবারের পরীক্ষায় শতভাগ উপস্থিতি ছিল। তবে শিক্ষকদের বাড়তি চাপ হয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহে প্রতিদিন তাদের ক্লাসে আসতে হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কিছুটা ঝুঁকি কমানোর জন্য ছুটির দিনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের চলমান বার্ষিক পরীক্ষা ও ক্লাস শুক্র ও শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৯ নভেম্বরের নতুন শিক্ষাক্রমের ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেণির নির্ধারিত ক্লাস নেওয়া হয়েছে শুক্রবার। এছাড়া ৮ম ও নবম শ্রেণির পরীক্ষা সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পরীক্ষা নেওয়া হয় শুক্রবার বিকালে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ.এন.এম শামসুল আলম খান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান। এছাড়া অবরোধের ক্লাস মিস হলে সেটি শুক্রবার ও শনিবার মেকাপ করা হচ্ছে। শুক্র ও শনিবারের ক্লাস পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকে। তিনি বলেন, পরীক্ষা গ্রহণে সমস্যার কারণে পরীক্ষা সূচি পরিবর্তন করে শুক্র ও শনিবার নেওয়া হচ্ছে। এতে অভিভাবকরা সন্তুষ্ট। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের সরকারি স্কুলগুলোতে হরতালের মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানীর বড় আরও কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো রুটিন পরিবর্তন করেনি।
এসব প্রতিষ্ঠান আগের রুটিন মেনে রোববার-সোমবার পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
জানতে চাইলে রাজধানীর উদয়ন স্কুলে সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছি। ছুটির দিনে ক্লাস বা পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে না। সহিংসতা শিশু কিশোরদের মনে প্রভাব ফেলে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।
এদিকে লাগাতার হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শেষ প্রান্তিকের মূল্যায়নও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ নভেম্বরের পরিবর্তে এই দুটি শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমের বার্ষিক মূল্যায়ন ৯ নভেম্বর ধার্য করা হয়। তবে নতুন সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। আগে পিছে রুটিন পরিবর্তন করে পরীক্ষা নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানানো হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী হরতাল কিংবা অবরোধে স্কুলে আসতে পারছে না তাদেরকে স্কুলে অনুপস্থিত দেখানো যাবে না। বরং ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করাতে হবে।
আরো পড়ুন : শুধু পদ্মা সেতুর শতভাগ কাজ শেষ হলেও ৮ মেগা প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ