হলফনামায় তথ্যমতে প্রার্থীদের কারও সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে

অনুসন্ধানী অর্থনীতি জনপ্রতিনিধি তথ্য-প্রযুক্তি দুর্নীতি নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করা প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। সম্পদ বিবরণীতে কারও সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার তথ্য মিলেছে, আবার কারও কমেছে। শাজাহান খানের আয় বেড়েছে ৩২ গুণ আর মতিয়া চৌধুরীর কমেছে ৫ গুণ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-আরো পড়ুন : হলফনামায় তথ্যমতে স্বপনের ৫ আর ছেলের সম্পদ বেড়েছে ২৮ গুণ

শাজাহান খানের আয় বেড়েছে ৩২ গুণ

মাদারীপুর-২ আসন থেকে শাজাহান খান সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। হয়েছেন মন্ত্রীও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন।
সংসদ সদস্য শাজাহান খান মন্ত্রিত্ব হারানোর পর ব্যবসা থেকে আয় কমেছে। ২০১৮ সালে মন্ত্রী থাকাকালে তাঁর হলফনামা মোতাবেক ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ছিল ৩ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৫০ টাকা। মন্ত্রিত্ব হারানোর পর ২০২৩ সালের হলফনামায় বার্ষিক আয় ২ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৬২৪ টাকা। তবে শাজাহান খান ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ ও আয় ১৫ বছরে বেড়েছে সোয়া ৩২ গুণ। ২০০৮, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে শাজাহান খানের দাখিল করা হলফনামার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালে শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এবার আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৬২৪ টাকা। স্ত্রীর নামে অবিশ্বাস্য কম মূল্যে রাজউক পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। যার মূল্য মাত্র ২৩ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ছিলেন দেনাদার। ২০০৮ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬ টাকা, অস্থাবর সম্পদ ৫৭ লাখ টাকার। এখন তা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকায়। এবারের হলফনামা অনুযায়ী শাজাহান খানের দুটি গাড়ি রয়েছে, যার দাম ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ৮০ তোলা সোনা রয়েছে।

জাতীয় সংসদের উপনেতা শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরির আয় কমেছে ৫ গুণ  : এদিকে গত পাঁচ বছরে বার্ষিক হিসাবে জাতীয় সংসদের উপনেতা শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরির আয় কমেছে ৫ গুণ। তবে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও স্থিতি আছে স্থাবর সম্পত্তির। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখা যায় মতিয়ার মোট আয়ের পরিমাণ ৩ কোটি ১৭ লাখ ৪২ হাজার ১১০ টাকা। দ্বাদশ নির্বাচনের হলফনামায় দেখানো হয় ৬২ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৪ টাকা। গতবারের তুলনায় এবার তাঁর আয় কমেছে ৫ গুণ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষি খাতে আয় দেখানো হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকার শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত বাবদ ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯২৫ টাকা, চাকরি বাবদ ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩১ টাকা, অন্যান্য (বক্তৃতা, টিভি সম্মানি ও অন্যান্য) ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৮ টাকা। ২০১৮ সালে অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ৩০৫ টাকা এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেখানো হয়েছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৮৩৭। এ পাঁচ বছরে তাঁর মোট অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৩২ টাকা। এ ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ হয়েছে উত্তরাধিকারসূত্রে পৌনে ৪ একর কৃষিজমি, ঢাকার সাঁতারকুল মৌজায় অর্ধ বিঘা জমি যার মূল্য ধরা হয়েছে ১ লাখ টাকা, ঢাকার মধ্য বাড্ডায় ৫ কাঠার একটি প্লটের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার আশুলিয়ায় একটি প্লট ও একটি বাড়ির মূল্য আগের মতোই ৪ লাখ ৯৮ হাজার ২৯৫ টাকা দেখানো হয়েছে।

আবদুর রহমানের নামে এক বাড়ি, স্ত্রীর নামে চার ফ্ল্যাট : ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আবদুর রহমানের বার্ষিক আয় ২৮ লাখ ১১ হাজার ৬২৪ টাকা। তাঁর নিজের নামে নেই কোনো ফ্ল্যাট। তবে স্ত্রীর নামে রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট। আয়ের উৎস হিসেবে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, কৃষি খাত থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০, ব্যবসা থেকে ৬ লাখ ২৭ হাজার ৪০০, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭২, চাকরি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পারিতোষিক প্রাপ্তি) ৪ লাখ, জমি বিক্রি থেকে মূলধনি লাভ ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৬০২ এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও পারিতোষিক হিসেবে ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বার্ষিক আয় করেন।

হলফনামা অনুযায়ী অস্থাবর সম্পদ, বর্তমানে আবদুর রহমানের নিজ নামে নগদ ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯২, স্ত্রীর নামে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮১০, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৫ লাখ ৮ হাজার ৮৬২, স্ত্রীর নামে ৭৮ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৩ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র ও স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার রয়েছে। হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে ২৪ লাখ ১১ হাজার ৪২২ টাকা মূল্যের কৃষিজমি, স্ত্রীর নামে ২ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার ৫৩ টাকা মূল্যের কৃষিজমি। এ ছাড়া ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ১২ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৮৪২ টাকার অকৃষি জমি। নিজ গ্রামে ৫০ লাখ ৮০ হাজার ৬২৫ টাকার একটি দালান রয়েছে। স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ১২ হাজার ৮০৯ টাকা মূল্যের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

১ কোটি নগদ টাকা আছে রণজিৎ রায়ের : যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়ের কাছে নগদ ১ কোটি টাকা আছে। তিনবারের এই সংসদ সদস্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। সম্পদ বেড়েছে তাঁর স্ত্রী নিয়তি রানীরও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২০০৮ সাল থেকে নৌকার টিকিট নিয়ে রণজিৎ রায় পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার নৌকার টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংসদ সদস্য রণজিতের বর্তমানে বার্ষিক আয় ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ টাকা; যা ২০০৮ সালে ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে রণজিৎ রায় তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য দেখিয়েছিলেন ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৮ টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রীর সম্পদ ছিল ৮৫ হাজার টাকা। বর্তমানে যা ২ কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৯৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। স্ত্রীর নামে ২০০৮ সালে কোনো জমি বা বাড়ি না থাকলেও বর্তমানে তিনটি বাড়ি আছে, যার মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

২০০৮ সালে রণজিৎ রায়ের কাছে নগদ ছিল ১ লাখ টাকা। এখন নগদ আছে ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর স্ত্রীর কাছে নগদ ছিল ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে ৫১ লাখ ১৬ হাজার ৮৪০ টাকা আছে।

আরো পড়ুন : স্বীকারোক্তি দিয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন কৃষিমন্ত্রী

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *