হলফনামায় তথ্যমতে স্বপনের ৫ আর ছেলের সম্পদ বেড়েছে ২৮ গুণ

অনুসন্ধানী অর্থনীতি ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ জনপ্রতিনিধি জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি দুর্নীতি নির্বাচন প্রচ্ছদ রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করা প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। সম্পদ বিবরণীতে প্রায় সব প্রার্র্থীরই সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার তথ্য মিলেছে। অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপির সম্পদ অস্বাভাবিক বাড়লেও কারও কারও সম্পদ আগের চেয়ে কমেছে। আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা আগের বছরের সঙ্গে এবারের সম্পদ বিবরণী বিশ্লেষণ করে পাঠিয়েছেন।

কৃষিমন্ত্রীর সম্পদ বাড়েনি
টাঙ্গাইল : গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী টাঙ্গাইল-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. আবদুর রাজ্জাকের ব্যবহৃত গাড়ি ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ছাড়া আর তেমন কোনো সম্পদ বাড়েনি। ২০১৮ সালে তিনি ভাড়া পেতেন বছরে ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা ছিল ৭২৬ টাকা, এমপি হিসেবে সম্মানী ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও করমুক্ত আয় ১৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া মৎস্য চাষ হতে আয় ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ ৮১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, ২৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা মূল্যের চারটি ফ্ল্যাট ও ১৬ লাখ টাকা মূল্যের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়াও ৫ বছর আগে তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও জমা ৪৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, ঢাকা ও গাজীপুরে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা মূল্যের প্রায় ৯ কাঠা জমি, সাভারে উপহার পাওয়া ৫ কাঠা জমির কথা উল্লেখ করেন। এবারের হলফনামা অনুযায়ী ভাড়া পান বছরে ১২ লাখ ৪ হাজার ৭০৩ টাকা, শেয়ার ও আমানত ৭৯ হাজার টাকা, করযোগ্য আয় ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, কর অব্যাহতি আয় ১৮ লাখ ৮ হাজার টাকা, নগদ অর্থ ৪৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, শেয়ার ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৬৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার গাড়ি রয়েছে। ২০১৮ সালে স্ত্রীর নামে টাকাসহ জমি দেখালেও এবারের হলফনামায় স্ত্রীর নামের কোনো সম্পদ উল্লেখ করেননি তিনি।

প্রতিমন্ত্রী স্বপনের সম্পদ বেড়েছে পাঁচ গুণ, ছেলের ২৮ গুণ

যশোর : যশোর-৫ আসনের এমপি ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের সম্পদ গত ১০ বছরে বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। একই সময়ে স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের সম্পদ তিন গুণ আর ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের সম্পদ ২৮ গুণ বেড়েছে। তবে প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বাড়ার পাশাপাশি দায়-দেনাও বেড়েছে। হলফনামা অনুযায়ী, স্বপন ভট্টাচার্যের ৫ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকার স্থাবর ও ৪ কোটি ৯০ লাখ ৫২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ। দশম নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তখন তার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ছিল ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকার। এ সময়ে তার দায় বেড়েছে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ১০ বছর আগে তার ঋণ ছিল ৬০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তার ঋণ ২ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ১০ বছর আগে ব্যাংকে ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা থাকলেও বর্তমানে স্বপন ভট্টাচার্যের ব্যাংকে জমা আছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এদিকে স্ত্রী সন্তানের সম্পদও বেড়েছে অস্বাভাবিক। ১০ বছর আগে স্বপন ভট্টাচার্যের স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্যের সম্পদ ছিল ১ কোটি ১২ লাখ ২৭ হাজার টাকার। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। তবে বিনিয়োগের বিপরীতে তার দেনা আছে ১ কোটি টাকা। স্বপন ভট্টাচার্যের ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের ১০ বছর আগে সম্পদ ছিল ১১ লাখ ৪৯ হাজার টাকার। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ২৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকার।

সম্পদ কমেছে উপমন্ত্রী শামীমের, আছে ঋণ

শরীয়তপুর : শরীয়তপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক শামীমের পাঁচ বছরে নগদ টাকা ও সম্পদ কমেছে। এ ছাড়াও গাড়ি কিনতে ঋণ নিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এমপি হয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনি। হলফনামার তথ্য অনুসারে ২০১৮ সালে বার্ষিক আয় ছিল ২৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই আয় কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ২০১৮ নির্বাচনের সময় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ছিল ১৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। উপমন্ত্রী হওয়ার পর তা বন্ধ করে দিয়ে মূলধন ফিরিয়ে এনেছেন। ওই মূলধন দিয়ে সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত করেছেন। ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় কৃষি জমি ও অকৃষি জমি ছিল ৩৩ লাখ ২৭ হাজার টাকার। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় (কৃষি জমি ও অকৃষি জমি) ওই সম্পদ আছে ৮ লাখ ৪২ হাজার টাকার। এনামুল হক শামীম জানান, উপমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বেতন-ভাতা ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পারিবারিক (বাবার) কৃষি ও মৎস্য খাতের আয় দিয়ে রাজনীতি করছেন। এমপি ও উপমন্ত্রী হওয়ার পর একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদ ছেড়ে দেন তিনি। ব্যবসা বন্ধ করে ওই মূলধন দিয়ে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করেন।

রুস্তুম ফরাজীর আয় বেড়েছে তিন গুণ

পিরোজপুর : পাঁচ বছরের ব্যবধানে পিরোজপুর-৩ আসনের এমপি রুস্তুম আলী ফরাজীর কৃষি খাত থেকে আয় বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, যদিও তার কৃষি জমির পরিমাণ একই রয়েছে। হলফনামার তথ্যানুসারে ২০১৮ সালে কৃষি জমি থেকে ফরাজীর বার্ষিক আয় ছিল ৬৫ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই আয়ের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ফরাজীর নগদ অর্থের পরিমাণও বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। ২০১৮ সালে তার স্ত্রীর কোনো নগদ অর্থ না থাকলেও বর্তমানে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। গত নির্বাচনে ব্যাংকে তার ৩০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা জমা থাকলেও বর্তমানে সেই অর্থের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। একবার বিএনপি, দুবার জাতীয় পার্টি এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন রুস্তুম আলী ফরাজী। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিতেছেন ফরাজী। তবে এবার জাতীয় পার্টি তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

সম্পত্তি তিন গুণ বেড়েছে মন্ত্রী বীর বাহাদুরের

বান্দরবান : পার্বত্যজেলা বান্দরবানের এমপি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২০১৪ নির্বাচনে বীর বাহাদুর ও তার স্ত্রীর স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ১০ বছরের ব্যবধানে সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ১৪ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

হলফনামা তথ্যে জানা গেছে, ২০১৪ সালে নিজের কোনো সম্পদ প্রদর্শিত না হলেও পিতার রাবার ব্যবসা খাতে বার্ষিক আয় ছিল ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে বীর বাহাদুরের আয় দাঁড়ায় ১ কোটি ৫৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে এসে আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বীর বাহাদুর স্ত্রী মে হ্লা প্রু এর কোনো বার্ষিক আয় দেখানো হয়নি। ২০২৩ সালে স্ত্রীর বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৬৩ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের হলফনামায় বিয়েতে প্রাপ্ত বীর বাহাদুরের স্বর্ণ ছিল ৫০ ভরি এবং তার স্ত্রীর ছিল ৪০ ভরি স্বর্ণ। বর্তমানেও একই পরিমাণ স্বর্ণ দেখানো হয়েছে। তবে ৯০ ভরি স্বর্ণের মূল্য দেখানো হয় মাত্র ৯ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে বীর বাহাদুরের কোনো ব্যাংক ঋণ ছিল না। ২০২৩ সালের ব্যাংক ঋণ ১ কোটি ৩৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

বকুলের আয় বেড়েছে ৪০ গুণ

নাটোর : নাটোর-১ আসনের এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের আয় বেড়েছে প্রায় ৪০ গুণ। ২০১৮ সালের হলফনামায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আয় থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১ কোটি ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হয়েছে। তবে সম্পদের পাশাপাশি ঋণও আছে বকুলের। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর কৃষি খাত থেকে বছরে আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং মৎস্য খাত থেকে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে বকুলের সম্পদ ছিল ৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকার। ২০২৩ সালে এ সম্পদ প্রায় ২৪ গুণ বেড়ে ২ কোটি ৪১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা হয়েছে। ২০১৮-তে স্ত্রীর কোনো আয় না থাকলেও এবার ১০ লাখ ৭ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে।

আরো পড়ুন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৮৯৬

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *