হলফনামায় তথ্যানুযায়ী প্রার্থীদের কার কত সম্পদ

অনুসন্ধানী অর্থনীতি জনপ্রতিনিধি জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

স্ত্রী-কন্যা-নাতিদের দানে পাঁচ বছরে ২৪ কোটি টাকার সম্পত্তি কমেছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সম্পদ কমেছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। হবিগঞ্জে কোটি টাকার মালিক বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। পক্ষান্তরে তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যারিস্টার সুমনের রয়েছে ৫০ লাখ টাকা ঋণের বোঝা। এ ছাড়া হবিগঞ্জের আরেক প্রার্থী মজিদ খানের ১৫ বছরে ৬০ গুণ সম্পদ বেড়েছে। মেহেরপুর-১ আসনের এমপি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কমেছে আয় ও অস্থাবর সম্পত্তি। বেড়েছে ঋণ। বগুড়ার এমপি রেজাউল করিম বাবলু শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। পাঁচ বছরে আয় বেড়েছে ৭২৪ গুণের বেশি। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

কুমিল্লা : স্ত্রী, কন্যা ও নাতি-নাতনিদের দান করে সম্পত্তি কমেছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। গত পাঁচ বছরে ২৪ কোটি ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩০ টাকার সম্পত্তি কমেছে। বিগত গত সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় উল্লেখ ছিল মন্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ৬২ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ১৫৩ টাকা। গত পাঁচ বছরে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মাননা বাবদ তিনি পান ৭ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ৬৪৮ টাকা।

কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ২০১৮ সালের নির্বাচনি হলফনামায় মোট সম্পত্তির পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ১২ কোটি ৩১ লাখ ৩২ হাজার ৪৩১ টাকা। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজারে। এ পাঁচ বছরে তাঁর সম্পত্তি বেড়েছে ২৪ কোটি ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫৬৯ টাকা।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার চার এমপির মধ্যে শুধু মাহবুব-উল আলম হানিফের সম্পদ কমেছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার। চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-২ আসনের প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নগদ ও ব্যাংক জমার পাশাপাশি তার কাছে রয়েছে ১১ হাজার ৯৪ ইউরো। রয়েছে দুটি অস্ত্র। এ ছাড়াও তার দুই ছেলের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩৬ কোটি টাকার ঋণ আছে।

চট্টগ্রাম-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা নিরাপত্তার জন্য রেখেছেন একটি পিস্তল এবং একটি শটগান। তার কোনো ব্যাংক ঋণ নেই। তবে বাড়ি ভাড়া বাবদ ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা তিনি অগ্রিম নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরীর কাছে রয়েছে ১০ হাজার ৩২ ইউএস ডলার। আছে অস্ত্র। তার দুটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি আছে, যার মূল্য ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

রংপুর : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, বাড়ি ভাড়া থেকে তার আয় ৩ লাখ টাকা। শেয়ার সঞ্চয়পত্র আছে ৩০ লাখ টাকার। আর প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ১০ লাখ টাকা।

বরিশাল : বরিশালের ছয়টি আসনে সবচেয়ে ধনবান প্রার্থী বরিশাল-৩ আসনের জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু। তার বছরে আয় ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৮ হাজার ৮০৬ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকে আছে ১৪ কোটি ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭১ টাকা। সম্মানি ভাতা পেয়েছেন ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ স্বশিক্ষিত। ব্যবসায় আয় বার্ষিক ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৩ এবং কৃষি থেকে আসে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে আমানত আছে ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৮৯৮ টাকা। এমপি হিসেবে বছরে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৫০৯ টাকা। ব্যাংকে জমা ২৫ কোটি ৯৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯ টাকা। ঋণপত্র কেনা আছে ৫১ লাখ ৮০ হাজার টাকার।

বরিশাল-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার মো. ইউনুসের বার্ষিক আয় ১০ লাখ ২৬ হাজার ১৮৫ টাকা। ব্যাংকেসহ নগদ আছে ১১ লাখ ৫১ হাজার ২৯১ টাকা। ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৯১২ টাকা মূল্যের একটি জিপ ছাড়াও ৩০ তোলা স্বর্ণালংকার রয়েছে।

এ আসনের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি হিসেবে বছরে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। নগদ ১ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭১, ব্যাংকে ১৪ লাখ ৬০০ এবং স্থায়ী বিনিয়োগ রয়েছে ২০ লাখ টাকা। গাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এক বন্ধুর কাছে ২ কোটি টাকার ঋণ আছে মেননের। এই আসনে জাপার প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বিএসসির বার্ষিক আয় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা। এই আসনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী পংকজ দেবনাথের বার্ষিক আয় ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এমপি হিসেবে সম্মানি পেয়েছেন ২৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৫০ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকে জমা ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ৬৫৩ টাকা। স্থায়ী আমানত ১ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার ৭৭ টাকা। গাড়ির মূল্য ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৮১৫ টাকা, স্বর্ণালংকার ৬৭ ভরি এবং পূর্বাচলে অকৃষি জমি আছে ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার।

বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ ফারুকের ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৯ লাখ, নগদ ৫৮ লাখ ১১ হাজার ৬০৩ এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আছে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার। এ আসনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র স্বশিক্ষিত সাদিক আবদুল্লাহ বছরে বাড়ি ও দোকান ভাড়া পান ২ লাখ ৭০ হাজার। এ ছাড়া ব্যবসায় আয় ৭ লাখ ৫০ হাজার এবং নগদ আছে ২ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৫ টাকা। এ ছাড়া ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকার অকৃষি জমি এবং ঢাকার গুলশানে একটি ফ্ল¬্যাট রয়েছে।

বরিশাল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিকের বাড়ি ও দোকান ভাড়া বাবদ আয় ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ব্যাংক আমানত আছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৭ টাকা এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী স্বশিক্ষিত নাসরিন জাহান রত্না বাড়ি ভাড়া বাবদ আয় ৬ লাখ ২৮ হাজার, এমপি হিসেবে আনুতোষিক পেয়েছেন ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে নগদ ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৪ ৬৪ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে ২২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮১ টাকা এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ১ কোটি ৫০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। দুটি গাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩০ টাকা এবং ১০০ তোলা স্বর্ণ আছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলীর নগদ ৩ লাখ ৫০০ এবং তার স্ত্রীর নগদ রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। তবে তার ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৮ এবং স্ত্রীর ব্যাংকে রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৩৫ টাকা। এ ছাড়া নির্ভরশীলদের ব্যাংকে রয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৬ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থেকে বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৬ টাকা। এদিকে, এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নগদ ১১ লাখ ৬১ হাজার, ৫ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র রয়েছে ২০ হাজার টাকার। এ ছাড়া ৫০ লাখ টাকা ঋণ আছে।

অপরদিকে, হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবদুল মজিদ খানের গত ১৫ বছরে সম্পদের হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। এখন ঋণের তালিকায় তার নাম নেই। সম্পদের পরিমাণ লাখের অঙ্ক থেকে পৌঁছে গেছে কোটি কোটি টাকায়। গত ১৫ বছরের ব্যবধানে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৬০ গুণ। বর্তমানে নগদ টাকাসহ ৪ কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩৯ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক।

বগুড়া : রূপকথার আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে শূন্য থেকে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এসএসসি পাস রেজাউল করিম বাবলু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় তার এবং তার ওপর নির্ভরশীলের বার্ষিক আয় দেখান ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ সংসদ সদস্য হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মাসিক আয় ছিল ৪১৭ টাকা। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৫ টাকা। অর্থাৎ এখন তার মাসে আয় ৩ লাখ ২ হাজার ২৮ টাকা। এই হিসাবে আয় বেড়েছে ৭২৪ গুণের বেশি।

মেহেরপুর : মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কৃষি থেকে বছরে ২৫ লাখ ১৮ হাজার, ব্যবসা থেকে ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৪, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক আমানত থেকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ২০১ টাকা এবং পারিশ্রমিক, ভাতা, সম্মানি হিসেবে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৫ টাকা আয় করেন। এ হিসাবে তার আয়ের বড় অংশটি আসে পারিশ্রমিক, ভাতা ও সম্মানি থেকে। নগদ রয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৬ টাকা, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ৬ লাখ টাকা। ১০ বছর আগে সংসদ নির্বাচনের সময় নগদ ছিল ৯ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে জমা ছিল ১১ লাখ ৭৬ হাজার ২৩৮ টাকা। বর্তমানে তার ব্যাংকে আছে ২৯ লাখ ১ হাজার ৯১৫ টাকা এবং পোস্টাল সেভিংস রয়েছে ৪০ লাখ টাকার, যার অর্ধেক তার স্ত্রীর নামে।

গাজীপুর : গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক হলফনামায় কৃষি খাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত/ব্যাংক সুদ বাবদ ১৮ হাজার ৯৯৮ টাকা আয় দেখিয়েছেন। ব্যাংকে জমা আছে ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫০ টাকা। ভাওয়াল প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে একটি প্রতিষ্ঠানে শেয়ার রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। স্বর্ণ রয়েছে ৭ ভরি, যার মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আসবাবপত্র রয়েছে দেড় লাখ টাকার।

গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর আয় ও সম্পদ কমেছে। ব্যবসা থেকেও রাসেল ও তার নির্ভরশীলদের আয় কমেছে।

আরো পড়ুন : ‘বিরল সফরে’ আমিরাত থেকে সৌদি গেলেন পুতিন

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *