ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ মাঠ ভরা হাজার হাজার বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন হলেও ঘরে তুলতে হিমসিম খেতে হতো হাজারো কৃষককে। সারা বছর ধরে ফসল আর ফসল। ধান, গম, শরীষা সব ধরণের ফসল উৎপাদন হলেও প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘরে তুলা নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো কৃষদের। দীর্ঘদিন ধরে অসহায় হাজারো কৃষকের দাবী ছিল বিলভাতিয়া এলজিইডি পাকা রাস্তা থেকে সুরানপুর নতুন বিজিবি ক্যাম্প হয়ে বুড়িডোবা পর্যন্ত ১হাজার মিটার রাস্তা নির্মাণ করে তাঁদের কষ্টে উৎপাদিত ফসল হাসি মুখে ঘরে তুলার জন্য। কিন্ত কে শুনে কার কথা। দিনের পর দিন রাতের পর রাত গড়িয়ে গেলেও অসহায় কৃষকের পাশে দাঁড়ানোরু মানুষের ছিল বড্ড অভাব ছিল । সেই অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ালেন ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবসসুম। হাসি ফুটালেন হাজারো কৃষকের মুখে।
কৃষকের দাবীর মুখে সরজমিন ছুটে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবসসুম, সাথে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ কাউসার আলম সরকার। স্থানীয় কৃষক তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরে রাস্তাটি নির্মাণের দাবী জানান। কৃষকের দাবীর প্রেক্ষিতে আলোচনা সাপেক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ রাস্তাসমূহ টেকসই করণের লক্ষ্যে হেয়ারিং বোন বন্ড(এইচবিবি) সোলিং প্রকল্পটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের অর্থায়ণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বাস্তবায়ণে রাস্তাটি নিমার্ণ সম্পন্ন করা হয়। এতে প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমির ফসল ঘরে তুলতে পারার আশায় হাজারো কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
সরজমিনে গিয়ে ২৬ নং গভীর নলকূপের ঘরে কথা হয় পাঁচটিকরি গ্রামের কৃষক মোঃ হাবিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, এ গভীর নলকূপে আমি সোয়া ২বিঘা জমি চাষাবাদ করি। এখানে প্রায় ১হাজার মিটার রাস্তা কাঁচা থাকায় মানুষ বৃষ্টি বাদলে যাতাযাত করতে পরতো না। কৃষকেরা মাঠে কাজে আসলে সাইকেল ডিপের নিকট রেখে যেত। এখন রাস্তাটি নিমার্ণ হওয়ায় ফসল ঘরে উঠাতে কোন অসুবিধা হবে না। রাস্তাটিতে এখন কাজের চাপ কম থাকায় মানুষ কম চলাচল করলেও কাজের সময় ৩/৪ হাজার মানুষ চলাচল করে। রাস্তাটি হওয়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য হাত তুলে দোয়া করছি আমরা।
গভীর নলকূপ মালিক তীলোকী গ্রামের মোঃ বাশির বলেন, বিলভাতিয়ার বুড়ি ডোবা এলাকায় ২০১২ সালে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করে ১’শ ৬০ বিঘা বা কখনো বেশী জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসলে পনি সেচ দিই। বৃষ্টি হলে কাদাতে এ রাস্তায় চলাচল করা যেত না। রাস্তাটি হিয়ারিং হওয়াতে হাজার হাজার কৃষকের কষ্ট কমলো। তিনি বলেন, গত বছর বৃষ্টি হওয়ায় অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে ধান মাথায় করে ২৬ নং ডিপের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছে। এতে খুব কষ্ট হতো এবং খরচ বেশী হয়েছে। এখন থেকে এ সব বিপদ থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার কৃষক।
শ্রমিক মোঃ সাদিক, মোঃ রাব্বুল ও মোঃ অলিফ বলেন, আগে সাইকেল নিয়ে কাজে আসলে বৃষ্টি হলে বাড়ী ফেরা মুশকিল হতো, এখন সে ভয় নেই। এখন খুব ভালো লাগছে।
দর্শনার্থী মোঃ জহির বলেন, ভোলাহাট উপজেলায় কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় আমরা বিলভাতিয়ায় মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে যাই। আগে মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছি বৃষ্টি হলে কাদাতে বাড়ী ফেরা স্বপ্নের মত মনে হতো। এখন সোজা ধান ক্ষেতের মধ্যদিয়ে রাস্তা নিমার্ণ হয়েছে চলে গেছে বহু দুর। বর্ষা মৌসুমে এ যেন ছোট কোয়াকাটা হিসেবে সবাইকে মুগ্ধ করবে। এদিকে ভারত সীমান্ত নিকটে হওয়ায় বিজিবি ক্যাম্প নিমার্ণ হচ্ছে। রাস্তাটি বিজিবি সদস্যদের সীমান্ত সড়ক হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলেও তিনি জানান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ কাউসার আলম সরকার জানান, রাস্তাটি নির্মাণে কৃষকের খুব উপকার হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কৃষকের দাবী ছিল বিলভাতিয়া রাস্তাটি নির্মণের। বর্ষার সময় কৃষদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে সমস্যায় পড়তে হতো। অনেক কৃষকের ফসল নষ্ট হতো। কৃষকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে রাস্তাটি করে দেয়া হয়। রাস্তাটি নির্মাণ করাতে কৃষকেরা তাদের ফসল হাসিমুখে ঘরে তুলতে পারবে।
গোলাম কবির- ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)