স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সরকারি দল বলছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবিতে তারা এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা সফরে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল। দলটির পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করবে তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসবে কিনা। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। ওই দলটির আলোচনার মূল ইস্যু ছিল অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সরকারের তরফে বিদেশি প্রতিনিধি দলগুলোকেও অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে দফায় দফায়।
এমন অবস্থায় ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনটি ছিল একটি পরীক্ষা। দেশ-বিদেশের সবাই তাকিয়ে ছিলেন এই নির্বাচনের দিকে। সবাই ধারণা করেছিলেন অন্তত এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের একটা মহড়া হবে। কিন্তু নির্বাচনে যে চিত্র দেখা গেছে তা অনেকটা হতাশার। দিনভর ভোটার খরার মধ্যে শেষের দিকে নির্বাচনের অন্যতম প্রার্থী আশরাফুল আলমের (হিরো আলম) ওপর বর্বর হামলার খবর ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। অনেকে বলছেন, এ হামলার মধ্যদিয়ে কি সুষ্ঠু নির্বাচনের একটা মহড়া দেখা গেল!
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল দেশ-বিদেশে। কারণ বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও বগুড়ায় নির্বাচন করে আলোচনায় আসা হিরো আলম এখানে প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে প্রচারণা চালাতে গিয়েও তিনি এক দফা হামলার শিকার হন। এমন অবস্থায় ভোটের দিনও তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ফল যাই হোক ভোটের শেষ পর্যন্ত তিনি মাঠে থাকবেন। ছিলেনও। সকালে অনেক কেন্দ্রে তার এজেন্টদের থাকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন। ভোট গ্রহণের শেষ সময়ে বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে যান পরিদর্শনে। বেলা তিনটার পর কেন্দ্রের ভেতরেই তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীদের আক্রোশের শিকার হন। তাকে ঘিরে নানা অশালীন উক্তি করা হয়। তাকে ঘিরে জটলা করেন নৌকার ব্যাজ পরা কর্মীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে আনে। কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পরই তার ওপর আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা শুরু করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই নৌকার ব্যাজ পরিহিত কিছু যুবক জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। হামলাকারীদের কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরে এবং বলে, এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না। তুই এমপি’র মানে বুঝিস। তুই ভুয়া। এরপর নৌকার ব্যাজ পরিহিত লোকজন হিরো আলমকে মারধর এবং তাকে কেন্দ্র থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেন। এ সময় পাশেই পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা তাকে মারতে মারতে সেখান থেকে কিছুদূর পর্যন্ত নিয়ে যান। হিরো আলমকে রক্ষায় তার কিছু সমর্থক তাকে ঘিরে রাখার চেষ্টা করেন। এসময় ওই কর্মীদের ওপরও হামলা করা হয়। এক পর্যায়ে হামলাকারীদের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হিরো আলম। এ সময় তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে দেখা যায়। নিজেকে বাঁচাতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে সামনে যেতে থাকেন হিরো আলম। কিছু দূর যাওয়ার পর তিনি একটি রিকশায় উঠেন। এসময় দুজন তাকে সহযোগিতা করেন। এরপর রিকশা থেকে নেমে আবার তিনি দৌড়াতে শুরু করেন। নৌকার ব্যাজ পরা হামলাকারীদের কয়েকজনের হাতে এসময় লাঠিসোটাও ছিল। এ সময় হিরো আলমকে উদ্ধার করতে যাওয়া তার কিছু কর্মীও মারধরের শিকার হন। পরে একটি গাড়িতে করে হিরো আলম ও আহত কয়েকজন কর্মী রামপুরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বেটার লাইফ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডা. রাজিব বলেন, হাসপাতালে আসার পর হিরো আলমসহ মোট চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তার মাথায় আঘাতের কথা জানালে হিরো আলমকে মাথার সিটি স্ক্যানসহ কয়েকটি টেস্ট করতে বলা হয়েছে। তার শরীরে কোথাও গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা শেষে হিরো আলম নিজ থেকেই বাসায় চলে যাওয়ার কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দেয়। এদিকে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ শহীদুল্লাহ বিল্পব ও সানোয়ার গাজী। আটককালে এ ২ জন নিজেদের বনানী থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেছেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলের সামনে থেকে তাদের আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।
উপনির্বাচনে হিরো আলমের প্রধান সমন্বয়ক মো. ইলিয়াস বলেন, আমরা সারাদিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বেটার লাইফ হাসপাতালে নেয়া হয় হিরো আলমকে। হামলার ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হিরো আলম বলেন, আমি সারাদিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করছি। বিকাল ৩টার পর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল কেন্দ্রে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে আমার ওপর একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক হামলা চালায়। আমাকে মারধর করে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে। এদিকে হিরো আলমের ওপর হামলার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন। সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, আশরাফুল আলম নামে একজন প্রার্থী ৬০-৭০ জন লোক নিয়ে কেন্দ্রে এসেছিলেন। এখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাদের নিরাপত্তার জন্য বাধা দিয়ে প্রটেক্ট দিয়ে বের করেছে। তাকে কেন্দ্রের ভেতর মারধর করা হয়েছে কিনা সেটা তো আমি দেখিনি। মারধরের এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি বিষয়টি দেখছি।
আরো পড়ুন : ইইউ’র সঙ্গে পাঁচ দলের পৃথক বৈঠকে অনড় অবস্থানে সবাই