স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে : কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী তাছলিমা আক্তার (৩৬) ও বড় মেয়ে মোহনা আক্তার (১১) কে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করার আলামত পেয়েছে সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিট। সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের বৃহত্তম ময়মনসিংহ টিমের সদস্য পরিদর্শক মুহাম্মদ ইউছুফ গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্ত ও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের পর তাদের শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। হত্যার আগে তাছলিমা ও তার বড় মেয়ে মোহনাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও আলামত মিলেছে। এদিকে চাঞ্চল্যকর এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় হোসেনপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ভাই কবিরুল ইসলাম নয়ন।
গত মঙ্গলবার রাতে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ জনকে আটক করেছে। তারা হলো- ছোটন মিয়া (৩৫), নিহতের দুই ভাসুর গোলাম মোস্তফা (৬০) ও রিপন মিয়া (৪০), জাহাঙ্গীর আলম (৫০), শফিকুল ইসলাম (৩৫), আরিফ মিয়া (৩০), ঝিনুক মিয়া (২২) এবং নিহত তাছলিমার জা কুমকুম আক্তার। আটককৃত সবাই হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের বাসুরচর গ্রামের বাসিন্দা। হোসেনপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান টিটু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে গতকাল কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহত ৩ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তাদের মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে নিজ ঘরের দু’টি বিছানার একটিতে মা তাছলিমা আক্তার এবং অপরটিতে তার দুই মেয়ে মোহনা আক্তার ও মুফারসিন আক্তার বন্যার (৭) লাশ পাওয়া যায়। নিহত তাছলিমা আক্তার বাসুরচর গ্রামের সৌদি প্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী এবং পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী নূরপুর গ্রামের মৃত শুক্কুর আলীর মেয়ে। এ ছাড়া নিহত দুই মেয়ের মধ্যে মোহনা স্থানীয় ৫৪নং বাসুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি এবং বন্যা প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাবা মঞ্জিল মিয়া ৫ বছর ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সৌদি প্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার বাড়িতে তার স্ত্রী তাছলিমা তাদের দুই মেয়ে মোহনা ও বন্যাকে নিয়ে বসবাস করতেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মোহনাকে স্কুলে নিয়ে যেতে প্রতিদিনের মতো তার বান্ধবী ফারজানা তাদের বাড়িতে যায়। ঘরের দরজা বন্ধ দেখে বাইরে থেকে মোহনাকে ফারজানা ডাকাডাকি করে। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সে দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজাটি খুলে যায়। ফারজানা ভেতরে গেলে তার মাধ্যমে ঘটনাটি জানাজানি হয়। পরে স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দু’টি বিছানায় মা ও দুই মেয়ের লাশ পায়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার), সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোহাম্মদ ফরহাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. আল-আমিন হোসাইন ও হোসেনপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিন্দ্য মণ্ডল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সিআইডি, পিবিআই ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহসহ ঘটনার ব্যাপারে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।
আরো পড়ুন : জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইউরোপে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশ