ঝালকাঠির জেলার ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১১৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ১৯০৯ সালের ৩রা মার্চ ঝালকাঠিতে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী এই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টির মূল ভবন সহ তিন তলা বিশিষ্ট প্রায় পরিত্যাক্ত একটি বিজ্ঞান ভবন, দোতলা বিশিষ্ট জরাজীর্ন ছাত্রাবাস সহ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের পরিত্যক্ত বাসভবন দিকে তাকালেই মনে হবে বয়সের ভারে যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের মূল ভবন সহ অন্য ভবন গুলো। ১৯৬৫ সালে মূল ভবন নির্মাণ হওয়ার পর থেকে বহুবার সংস্কার কাজ হয়েছে। বর্তমানে এক প্রকার জোড়া তালি দিয়েই ঝুকিপূর্ন ভবনে পঠিদান কর্মসূচি চললেও অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞান ভবনের অবস্থা খারাপ থাকায় সেখানে পাঠদান হয়না বললেই চলে।
মূল ভবন নির্মানের পর তিন তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান ভবন, দোতলা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস ও প্রধান শিক্ষকের বাসভবন নির্মান করা হলেও আজ তা ব্যবহারের অনুপযোগী প্রায়। তার পরেও বর্তমানে ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা দ্বারা দুই শিফটে বর্তমানে ১৭৪৩ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হয়। বর্তমানে মূল ভবনের যে অবস্থা যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে একই সাথে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অধিকাংশ শ্রেণীকক্ষের ছাদের নিচ অংশ থেকে প্লাস্টার ধসে ধসে পড়ছে এবং আহত হচ্ছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। ভবনের অবস্থা দেখে মনে হয় এ যেন বয়সের ভাড়ে ধীরে ধীরে বিদ্যালয়ের ভবনটি ভেঙে যাওয়ায় বেশিরভাগ শ্রেণীকক্ষে ক্লাস হচ্ছে না।
এ বিষয় বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ খান জানান, বর্তমানে আমাদের ভবনের যে অবস্থা যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। শুনেছি একনেকে নাকি দশ তলা বিশিষ্ট ভবন পাস হয়েছিল । আজ পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পত্রপ্রেরন করছি আমরা । মূল ভবনের অবস্থা খুব নাজুক থাকায় বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষ বন্ধ রয়েছে ।ভবনের যে অবস্থা ধসে পড়লে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে। এ বিষয় একাধিক শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, আমরা স্কুলে আসলে সব সময় চিন্তায় থাকি কখন ভবনের পলেস্তার ধসে মাথায় পড়ে আর আমরা আহত হই। শ্রেণিকক্ষ সংকটের জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যহত হচ্ছে আর আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ বিষয় একাধিক শিক্ষার্থীদের কাছে জানাতে চাওয়া হলে তারা জানান, ছাদ থেকে পলেস্তার ধসে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আমরা স্কুলে আসলে চিন্তায় থাকি কখন আমাদের মাথার উপরে ছাদের পলেষ্টার ধসে পড়ে।
এ বিষয় ঝালকাঠি শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ তৈয়বুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ভবনটি অনেক পুরাতন তাই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ । কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করিনি আমরা ভবনের ছাদ বেশী ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে সংস্কারের কাজ করছি । ভবনের দেয়াল গুলো ভালো ১০ ইঞ্চি গাঁথুনি থাকায় কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই । একতলা ছাদের কাজ ও শ্রেণিকক্ষের সংস্কার কাজ রমজানে শুরু করব । ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৯ হাজার টাকার সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে ২২ লক্ষ টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে । আরো ২০ লক্ষ টাকার সংস্কার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরো জানান, একনেকে ১০ তলা বিশিষ্ট স্কুল ভবন পাস হয়েছিল। অর্থ সংকটের কারণে বড় প্রজেক্ট আপাতত বন্ধ রয়েছে। ঢাকার হেড অফিসে সব সময় যোগাযোগ রাখছি বরাদ্দ পেলে আশা করি খুব শীঘ্রই নূতন ভবনের কাজ শুরু করতে পারবো। প্রাথমিক যে সমস্যা গুলো রয়েছে সেগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।
এ বিষয় শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জানান, আমরা আমাদের সন্তাদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাক কখন যেন কোন বিপদ ঘটে। বর্তমানে বিশ্বে যেভাবে ভূমিকম্প দেখা দিয়েছে বিদ্যালয় চলাকালিন সময় আমাদের দেশে উচ্চ মাত্রায় ভূকম্পন হলে হয়তো আমাদের সন্তানদেরকে বাঁচানোর উপায় থাকবে বলে মনে হয়না। এছাড়াও ঝালকাঠির সচেতন মহল মনে করেন খুব দ্রুত ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। তা না হলে যে কোন সময় ঝালকাঠিতে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আমরা ঝালকাঠি দুই আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এমপি মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উল্লেখ্য ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং ১৯৬৫ সালের ৩রা মার্চ সরকারি করন হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত ৫২জন প্রধান শিক্ষক দ্বারা স্কুল পরিচালিত হয়েছে।বর্তমানে বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি জামে মসজিদ রয়েছে ।
ইমাম বিমান, ঝালকাঠি
আরো পড়ুন : গোবিন্দগঞ্জে যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু\ মরদেহ উদ্ধার