নিজস্ব প্রতিবেদক : ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৭৪টিতেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। এসব আসনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দল এবং আসন ভাগাভাগিতে পাওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা অনেকটা নির্ভার রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেক আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা খুব একটা এলাকায়ও যাচ্ছেন না। প্রচারেও তাদের শম্বুকগতি। ফলে জমছে না ভোটের মাঠ। সারা দেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ থেকে ৭ জানুয়ারির ভোটের মাঠের এরকম চিত্র পাওয়া গেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, ১২৬ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে এসব আসনের কোনোটিতে দুই বা ততোধিক প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা আছে। তবে বাকি ১৭৪ আসনে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ ৫৮ ভাগ আসনের প্রার্থী আগেভাগেই জয়ের বন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন বলে তারা মনে করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোটের মাঠে এসব প্রার্থীর জয় এখন শুধু সময় ও আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১৬ দিন বাকি। এ নির্বাচনে ভোটে নেই দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করেছে। এ আসনগুলোয় নৌকার কোনো প্রার্থী নেই। জাতীয় পার্টির আরও ২ শতাধিক প্রার্থী ভোটের মাঠে থাকলেও তারাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে পারছেন না প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে বেশ কিছু আসনে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটের লড়াই জমিয়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগেরই মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ট্রাক, ঈগল ও কাঁচি মার্কার আক্রমণের মুখে পড়েছেন নৌকার ১২৬ আসনের মাঝি।
তথ্যানুসারে, কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই জয়ের পথে রয়েছেন গোপালগঞ্জের তিনটি আসনের প্রার্থীরা। পটুয়াখালীর চারটি সংসদীয় আসনের দুটিতে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকি) আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লাঙল প্রতীকের এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের ভোটের মাঠে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। কারণ আওয়ামী লীগ মনোনীত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই এ আসনে। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র না থাকায় সাবেক চিফ হুইপ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাতবারের এমপি, বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। নীলফামারী-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফতাব উদ্দিন সরকারকে জয়ের জন্য খুব একটা বেগ পেতে হবে না। মৌলভীবাজার-১ আসনে বর্তমান এমপি মো. শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-৩ আসনে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ও মৌলভীবাজার-৪ আসনে বর্তমান এমপি সাবেক হুইপ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. আবদুস শহীদের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত। কোনো চ্যালেঞ্জ ছাড়াই মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ আসনে নৌকার সহজ জয় পেতে পারেন সাকিব আল হাসান ও বীরেন শিকদার। কারণ বিশেষ করে বিএনপি কিংবা এ ধরনের কোনো বড় দলের প্রার্থী এমনকি হেভিওয়েট স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী এখানে নেই। ঝিনাইদহ-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বিপক্ষে দুর্বল বিদ্রোহী প্রার্থী। হবিগঞ্জ-৩ আসনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন নৌকার মাঝি ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান এমপি আবু জাহির। কুমিল্লার ১১ আসনের মধ্যে কুমিল্লা-১, ৭, ৯ ও ১০-এ একেবারেই নির্ভার রয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে পাঁচটিতে নৌকার প্রার্থীদের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। চট্টগ্রাম-৪, ৬, ৭, ৯ ও ১৩ আসনে ছোট ছোট দলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা থাকলেও তারা হিসাবের মধ্যে আসছেন না। চাঁদপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ড. সেলিম মাহমুদ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না বরগুনা-২ আসনে নৌকার সুলতানা নাদিরার সঙ্গে। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এ আসনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। বাগেরহাটের চার সংসদীয় আসনের তিনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাগেরহাট-১-এ পাঁচবারের সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২-এ বঙ্গবন্ধু পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম শেখ তন্ময় ও বাগেরহাট-৪-এ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ের পথে রয়েছেন। রাঙামাটিতে প্রতীক বরাদ্দের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত মনে করনেছ আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার ও জাতীয় পার্টির সমর্থিত প্রার্থী হারুনূর রশিদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো নেই কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী। তা ছাড়া যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারাও মাঠে নেই। অতীতের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন নিজ দলের বিদ্রোহী আজিজুস সামাদ আজাদ ডন। এবার মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের পুত্র। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অতীতের প্রতিদ্বন্দ্বী এম এ মান্নাকে সহযোগিতা করছেন ভোটের মাঠে। তার এমন ‘সবরে’ ভোটের মাঠে অনেকটা নির্ভার মন্ত্রী।
আরো পড়ুন : ভোলাহাটে টমেটো গাছ কেটে সর্বশান্ত করলো ভাইকে