১৫৫০ ছাড়াল ডেঙ্গুতে মৃত্যু, আক্রান্ত ঊর্ধ্বমুখী

জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ মুক্তমত স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

এডিস মশার কামড়ে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। মৌসুম শেষ হলেও থামছে না ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকোপ। প্রকৃতিতে হেমন্ত নামলেও মাঝেমাঝেই থেমে থেমে চলছে বৃষ্টি। গত সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টি ডেঙ্গুর বিস্তারকে আরও বাড়াবে বলে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, বৃষ্টির পানি জমে মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়। মশা প্রায় ৪০ দিন বেঁচে থাকে। এ সময়ের মধ্যে যদি তারা পানি না পায়, তাহলে তারা ডিম দিতে না পেরে মারা যাবে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মশা এখন ডিম দেওয়ার জন্য পানি পাবে। ফলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও ৪০-৫০ দিন স্থায়ী হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ডেঙ্গু ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চতে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু চিহ্নিত হওয়ার পর ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ৮৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর এ বছর দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ জনের। সরকারি হিসাবের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। তবে দেশে ডেঙ্গু এখন সারা বছর থাকবে। যেসব পাত্রগুলোতে বৃষ্টি ছাড়াও পানি জমা হয় অথবা নাগরিকরা পানি জমিয়ে রাখেন সেসব পাত্রে সারা বছরই এডিস মশার প্রজনন হবে। ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে যেন নিজ বাড়ি এবং বাড়ির আঙিনায় কোনো পানি জমা না থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৯৭ জন, মারা গেছেন পাঁচজন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত ২৮৬ জন, ঢাকার বাইরে আক্রান্ত ৯১১ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ২ হাজার ৪৫২ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৮২১ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৩১ জন। এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৫৫৪ জন। বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেক রোগী। এ হিসাব নেই সরকারের কাছে। তাই প্রকৃত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

দেশের খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা হলে অবহেলা না করে টেস্ট করতে হবে। রোগীরা হাসপাতালে দেরিতে আসছেন। যারা আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত কিংবা অন্তঃসত্ত্বা তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তরল খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত বমি, পেটে ব্যথা হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এখন শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি রোগী। সেখানে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা ডেঙ্গুজ্বরে সেবা দিচ্ছেন। জ্বর এলে তাদের পরামর্শ নিতে হবে।

বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৬৫ সালে। তখন এই রোগটি ঢাকা ফিভার নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে রোগটির সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ ছিল। সেই বছরে দেশে সর্বোচ্চ মারা যায় ২৮১ জন। তখন এটাই ছিল সর্বোচ্চ প্রাণহানি। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু খুবই দ্রুত বাড়ছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ জনে। দেশে ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যুতে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুন : জেনে নিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে যাচ্ছে কারা কারা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *