শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকেঃ পরিবেশের পরম বন্ধু শকুন আমাদের দেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা ১৯টি শকুনকে সেবা পরিচর্যা দিয়ে দিনাজপুরের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ এনিয়ে “ শকুন অবমুক্তকরণ ও সচেতনতা সভা” অনুষ্ঠিত হয়েছে। শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করা ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনা বাড়াতে পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করা বিশিষ্টজন,এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা সেই সভায় অংশ নেয়।
প্রকৃতি’র ঝাড়ুদার এই শকুন সম্পর্কে একসময় খারাপ ধারণা ছিল মানুষের। শকুনকে অশুভ এমনকি মৃত্যুর প্রতীক হিসেবেও কল্পনা করা হতো।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিদ মজুমদার বাবু বলেছেন, শকুন অশুভতো নয়, বরং মৃত পশু খেয়ে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। শকুন এক প্রকার পাখি। এটি মৃত প্রাণির মাংস খেয়ে থাকে। পাখিগুলো তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারি পাখি বিশেষ। সারা বিশ্বে প্রায় ২৩ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। এর মধ্যে ৬ প্রজাতির শকুন আমাদের দেশে রয়েছে। ৪ প্রজাতি স্থায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। দেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এর মধ্যে এক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির বাংলা শকুনও। শকুন অধিকাংশই বিপন্নপ্রায়।
আরো পড়ুন: ছাত্রদলের ক্যাডারদের হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেত্রীর বিভিশিকাময় আজ সেই দিন
পাঠ্যপুস্তক আর ইনটারনেটে পড়লেও অনেকে বাস্তবে দেখেনি শকুন। বাস্তবে শকুন দেখে বেশ আপ্লুত এ প্রজন্মের শিক্ষার্থরা।তাই এই শকুন দেখতে এখন ভীর করছে মানুষ। দিনাজপুরের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে আজ শনিবার দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরাও শকুন দেখতে ভীড় করেন। আরশাদ,মুকিদ,হায়দার শৈবাল,রতন,বীশাদ সহ কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলেন,বাস্তবে শকুন দেখা পেয়ে আমারা ভাগ্যমান মনে করছি। কেননা,শকুন এখন বিলুপ্তপ্রায়।
গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যাথানাশক ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে শকুন বিলুপ্তির পথে। ওই ওষুধ দেয়া পশুর মৃতদেহ ভক্ষণ করলে কিডনি নষ্ট হয়ে শকুন মারা যায় বলে জানালেন,আইইউসিএন এর বাংলাদেশ রিপ্রেজেনটেটিভ রাকিবুল আমিন।
বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা শকুনকে সুস্থ করার জন্য দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় সিংড়া জাতীয় উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে পরিচর্যা কেন্দ্র। বন বিভাগ ও আইইউসিএন-এর উদ্যোগে এখানেই তিন মাসের পরিচর্যায় সুস্থ করা হয়েছে ১৯টি শকুনকে। শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় ৭’শ একরের এই বিশাল বনভুমিতে। এ সময় বন ও পরিবেশ মন্ত্রলালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক রেজাউল করিম, বন অধিদপ্তরের সুফল প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায়,বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ.এস.এমজহির উদ্দিন আকন,প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিদ মজুমদার বাবু, আইইউসিএন এর বাংলাদেশ রিপ্রেজেনটেটিভ রাকিবুল আমিন, বগুড়া বন সংরক্ষক মো.আমিনুল ইসলাম,রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান,দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বশির আল মামুন, বন কর্মকর্তা আহমেদ নাইমুর রহমান সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে এ এনিয়ে “ শকুন অবমুক্তকরণ ও সচেতনতা সভা” অনুষ্ঠিত হয়েছে। শকুনের নিরাপদ এলাকা নিশ্চিত করা ও শকুন সংরক্ষণে সচেতনা বাড়াতে পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করা বিশিষ্টজন,এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা সেই সভায় অংশ নেয়।
(শাহ্ আলম শাহী)
দিনাজপুর থেকে।
আরো : দেড় হাজার মেট্রিক টন মধু আহরণের সম্ভাবনা দিনাজপুর লিচু বাগানে