এই অভিযান ছিল ২০ বছরের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা। এতে অন্তত আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ড্রোন হামলার পাশাপাশি বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল সোমবার শুরু হওয়া এই অভিযান ছিল ২০ বছরের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা। এই অভিযানে কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর এক থেকে দুই হাজার সেনা এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। গতকাল স্থানীয় সময় বিকেল নাগাদ বন্দুকযুদ্ধের খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় আরও ২৭ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত ড্রোন উড্ডয়নের শব্দের পাশাপাশি শহরজুড়ে বন্দুকযুদ্ধ ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। শহরের ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থীশিবির ঘিরে গড়ে ওঠা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সংগঠন জেনিন ব্রিগেড বলেছে, তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছেন এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
দুই দশক আগের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর জেনিন শহরে এ ধরনের বড় অভিযানের ঘটনা বিরল। সকালে কমপক্ষে ছয়টি ড্রোন শহরের ওপর ও শরণার্থীশিবিরের আশপাশে উড়তে দেখা গেছে। আধা বর্গকিলোমিটারের কম এলাকার এই শিবিরে প্রায় ১৪ হাজার শরণার্থী গাদাগাদি করে থাকেন।
এই শরণার্থীশিবির ঘিরে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বাড়ছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে জেনিনের মতো শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনিদের হামলায় প্রাণহানির পাশাপাশি ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের তাণ্ডব চালানোর ঘটনা ঘটেছে।
‘প্রকৃত যুদ্ধ’
গতকালের লড়াইয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে ফিলিস্তিনি অ্যাম্বুলেন্সচালক খালেদ আল-আহমেদ বলেন, ‘এই শরণার্থীশিবিরে যা ঘটছে, তা প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধই। শিবির লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালানো হচ্ছে। যখনই আমাদের পাঁচ থেকে সাতটি অ্যাম্বুলেন্স সেখানে যাচ্ছে, প্রতিবার আসার সময় অ্যাম্বুলেন্সগুলো পূর্ণ করে আহত ব্যক্তিদের নিয়ে আসা হচ্ছে।’
গতকাল বিকেল নাগাদ জেনিনে কমপক্ষে আট ফিলিস্তিনি নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। আগের দিন রাতে রামাল্লায় একটি তল্লাশিচৌকিতে গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ওই ফিলিস্তিনির মাথায় গুলি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, জেনিন ব্রিগেডের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা একটি ভবনে হামলা চালিয়েছে তাদের বাহিনীগুলো। তাদের দাবি, অবকাঠামো ধ্বংস ও শরণার্থীশিবিরকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা ঠেকাতে ব্যাপকতর সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হচ্ছে।
একটি ভিডিওতে ইসরায়েলের সাঁজোয়া বুলডোজারগুলোকে শরণার্থীশিবিরের সড়কগুলো খুঁড়ে ফেলতে দেখা যায়। দুই দশক আগের অভিযানে এসব সড়কের অধিকাংশই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। অভিযানের সময় টানা গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। বিকেলের দিকে একটি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলাও চালানো হয়েছিল।
অভিযান চলবে
ইসরায়েলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যতক্ষণ প্রয়োজন এই অভিযান চলবে। কর্মকর্তারা বলছেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সেখানে কয়েক দিন অবস্থান করতে পারেন। সিকিউরিটি কেবিনেটের সদস্য জ্বালানিমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, একটি অভিযান এক দিনে শেষ হয় না।
জেনিনের কাছে ২১ জুন ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। ২০০৬ সালের পর পশ্চিম তীরে এর আগে কখনো কোনো অভিযানে ড্রোন ব্যবহার করেনি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। একজন সামরিক মুখপাত্র বলেন, ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মাত্রা ও স্থলবাহিনীর ওপর চাপের মানে হলো, এ ধরনের (ড্রোন হামলার) কৌশল অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও যুদ্ধবিমান কিনছে ইসরায়েল
এদিকে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সরকার তাদের সর্বাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের তৃতীয় বহর কেনার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া সামরিক সহায়তার ৩০০ কোটি ডলার দিয়ে এই যুদ্ধবিমান কিনবে দেশটি।
গত রোববার এই ক্রয়াদেশ অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে দেশটির সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি লকহিড মার্টিনের তৈরি ২৫টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনবে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের বহরে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের সংখ্যা হবে ৭৫।
আরো পড়ুন : মালিকপক্ষের ‘ভাড়াটে হয়ে’ খুন করল শ্রমিকনেতা শহিদুলকে