২ হাজার কোটি টাকার স্কিম বন্ধ হওয়ায় কাজ নেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

অনুসন্ধানী অর্থনীতি আইন-আদালত ওকে নিউজ স্পেশাল দুর্নীতি প্রচ্ছদ মুক্তমত শিক্ষা হ্যালোআড্ডা

ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম চালু করেছিল স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এ কারিকুলাম বিস্তারণের জন্য নেওয়া হয়েছিল লুটপাটের স্কিম ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’। ২০২২ সালের জুলাইয়ে চালু হওয়া এ স্কিমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ফলাফলে দেখা গেছে, নতুন কারিকুলামে শিক্ষকরা প্রশিক্ষিত না হলেও স্কিম পরিচালক ইতোমধ্যে খরচ শেষ করেছেন ৮২৮ কোটি টাকা! অভিযোগ উঠেছে, কারিকুলাম বিস্তারণের নামে শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন স্কিমসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নতুন কারিকুলাম নিয়ে এ স্কিম প্রসঙ্গে বলেন, ‘নতুন কারিকুলামের নামে আগের সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। টাকা খরচের ব্যাপারে অনেক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করব।’ তিনি বলেন, যারা চাকরিজীবনে পুরোটা সময় শিক্ষকতা না করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে চাকরি করেছেন আর যারা সব সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করছেন সবার তালিকা হচ্ছে। এ নিয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তথ্যমতে, নতুন সিলেবাস অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের শিখন শেখানো পদ্ধতির প্রশিক্ষণ ছিল এ স্কিমের উদ্দেশ্য। এ স্কিমের আওতায় প্রায় ৭ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের তথ্য দিয়েছেন স্কিমসূত্র। তবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, যেনতেনভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসলে এ টাকা ভাগবাঁটোয়ারা করা হয়েছে। শিক্ষকদের নামমাত্র সম্মানি দেওয়া হলেও সিংহভাগ সম্মানি হিসেবে নিয়েছেন প্রশিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, পরিদর্শকসহ স্কিমসংশ্লিষ্টরা। স্কিম পরিচালক নিজের খেয়ালখুশিমতো কাছের মানুষদের নিয়ে মিলেমিশে খরচ করেছেন পুরো টাকা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভাগবাঁটোয়ারার এ স্কিম। তবে বিতর্কিত পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী রয়েছেন বহাল তবিয়তেই। তিনিসহ এ স্কিমের ১২ কর্মকর্তা (শিক্ষা ক্যাডার) ও সাত কর্মচারীর এখন কোনো কাজ নেই। তাই অনেকে অফিসেও আসেন না। যারা আসেন তারাও মেতে থাকেন খোশগল্পে। প্রতি মাসে বেতন তুলছেন লাখ লাখ টাকা। কাজ না থাকা এ শিক্ষা ক্যাডারদের সরকারি কলেজগুলোয় পদায়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা।

স্কিমসূত্রে জানা গেছে, এ স্কিমের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রশিক্ষণের নামে খরচ করা হয়েছে ২৫৪ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর খরচ করা হয়েছে ৫৭৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সব মিলে এ স্কিমে খরচ করা হয়েছে ৮২৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, কারিকুলামের বৈধতা দিতে অংশীজন সভার নামে রাজধানীর বিলাসবহুল হোটেলে করা হয়েছে দফায় দফায় বৈঠক। তবে সেখানে অংশীজনের মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল না। বক্তা ছিলেন মন্ত্রী, এমপি, বিতর্কিত কারিকুলামের কনসালট্যান্টরাই। আবাসিক ট্রেনিং, অনলাইন প্রশিক্ষণসহ নামে-বেনামে অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। স্কিমের প্রশিক্ষণার্থী সিলেকশনের ক্ষেত্রেও স্বজনপ্রীতি করার অভিযোগ রয়েছে স্কিম পরিচালক মাহফুজ আলীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক পরিচালক জানান, স্কিমসংশ্লিষ্ট না হলেও পরিচালকের কাছের অনেকে একাধিকবার অংশ নিয়ে সম্মানি গ্রহণ করেছেন। জানা গেছে, স্কিম পরিচালক মাহফুজ আলী সব সরকারের আমলেই শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কাজ করেছেন। নিয়েছেন সুবিধাও। সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে চাকরি হলেও চাকরিজীবনের বড় সময় পার করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এ। দীর্ঘ চাকরিজীবনের পর তাঁকে একটি কলেজে বদলি করা হলেও তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী এক নেতার মাধ্যমে তদবির করে ২ হাজার কোটি টাকার এ স্কিমের পরিচালকের পদ বাগিয়ে নেন।

শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান শিক্ষকনেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে অনেক প্রকল্পের মতো শিক্ষার প্রকল্প-স্কিমেও লুটপাট হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেও শিক্ষা সেক্টরে এ চরিত্র বদল হয়নি। কারণ শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্বৈরাচারের দোসর অনেক কর্মকর্তা এখনো ঘাপটি মেরে আছেন। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া মাউশি কর্মকর্তারা এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। আওয়ামী আমলের লুটপাটের সঙ্গে জড়িত অনেককেই এখনো সরানো হয়নি।’

বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম বিস্তারণের নামে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা খরচ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘স্কিমের আওতায় প্রায় ৭ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে স্কিমের কাজ বন্ধ রয়েছে তবে আমরা এনসিটিবির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যেহেতু আরেকটি কারিকুলাম চালু হয়েছে ভবিষ্যতে আমরা চলমান কারিকুলাম নিয়েও কাজ করতে পারি।’ এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন : ২৯ ডিসেম্বর, আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *