প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বৃদ্ধি করেছে সরকার। আগের দাম থেকে এ ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ বিল বাবদ বছরে সরাসরি ৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হবে গ্রাহকদেরককে। এছাড়া বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বেশ কিছু পণ্য এবং সেবার দামও বাড়বে। দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে জনগণের খরচ বৃদ্ধির নতুন বোঝা তৈরি করলো বিদ্যুতের এ খুচরা মূল্যবৃদ্ধি।
প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের গড় দাম ৭ টাকা ১৩ পয়সা থেকে প্রায় ৩৬ পয়সা বাড়িয়ে ৭ টাকা ৪৯ পয়সা (৭.৪৮৬৫ টাকা) নির্ধারণ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন মূল্যহার কার্যকর করে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর ফলে প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদেরকে চলতি মাসে এবং পোস্টপেইড গ্রাহকদেরকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্ধিত দামে বিল পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে গত ১৪ বছরে ১১তম বারের মত বিদ্যুতের দাম বাড়ালো সরকার। দেশে বিদ্যুতের মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৪৩ লাখ।
গত বছরের জুনে ভোক্তা পর্যায়ে গড়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ হারে গ্যাসের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ৫ আগস্টে প্রতি লিটার ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোলের দাম যথাক্রমে ৩৪, ৪৬ ও ৪৪ টাকা বাড়ায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। তবে ২৯ আগস্ট এ তিন জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা কমানোর পর ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোলের দাম দাঁড়ায় যথাক্রমে ১০৯, ১৩০ ও ১২৫ টাকা। নভেম্বরে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর পর চলতি জানুয়ারিতে বাড়ানো হলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম।
গত বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ বিভাগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন এবং গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিইআরসিতে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর জমা দেয়া হিসাব বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সবশ্রেণীর গ্রাহকরা মিলে ৭ হাজার ৬৬৬ কোটি ৭০ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে। প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়ে। সে হিসেবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ হাজার ৪৩৩ কোটি ৩৭ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হবে। আগে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ছিল ৭ টাকা ১৩ পয়সা।
পুননির্ধারিত দাম অনুযায়ী ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৭ টাকা ৪৯ পয়সা। এ দরে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বছরে বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয় হবে ৬৩ হাজার ১৬৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৩৬ পয়সা মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়ছে বার্ষিক প্রায় ৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
এদিকে জনগণ বাড়তি দাম দিয়েও বিদ্যুৎ খাতের মোট খরচ উঠাতে পারবে না। এ খাতে এখনও বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে। মূলত: গ্রাহকের দেয়া টাকা ও অর্থ বিভাগের ভর্তুকির টাকা দিয়ে এ খাতের খরচ নির্বাহ করা হচ্ছে। আর বছরে বড় পরিমাণে মুনাফা অর্জন করছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
ছয়টি বিতরণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতাধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ সমিতিগুলোর গ্রাহকরা প্রায় ৪ হাজার ১৫০ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিক থেকে আরইবির পর শীর্ষ সংস্থাগুলো হলো যথাক্রমে পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকো এবং ওজোপাডিকো।
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা-অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে অনেক অযৌক্তিক ব্যয় রয়েছে। এগুলো না বন্ধ করে সরকার জনগণের ব্যয়ভার বাড়িয়ে দিয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো বন্ধ করে শৃঙ্খলা-সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে দাম বাড়ানো দরকার হয় না।
দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে বিদ্যুতের মূল্য শতকরা ৫ ভাগ সমন্বয় করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : ব্রিটিশ রাজপরিবারের গল্প লিখে ৪১৭ কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন প্রিন্স হ্যারি