৫ লাখ ডলারের বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে নিউইয়র্কে দুদিনের বাণিজ্য মেলায়

অর্থনীতি আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ প্রবাস বিনোদন বিনোদন অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে শেষ হলো দুদিন ব্যাপী বাংলাদেশ অভিবাসী দিবস এবং বাণিজ্য মেলা। ইউএসএ-বাংলাদেশ বিজনেস লিংক, গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স এবং মুক্তধারা নিউইয়র্কের এই আয়োজনে ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন। নিউইয়র্কে সকাল থেকে বৃষ্টি এবং ঝড়ো হওয়ার মধ্যেও অংশ নিয়েছেন অসংখ্য বাংলাদেশী অভিবাসী । দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধি দল, ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা আশা করছেন এই আয়োজনে অন্তত ৫ লক্ষ ডলারের ব্যবসায়িক আদান প্রদান হবে। ২২ সেপ্টেম্বর এ আয়োজন উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী।

আয়োজক সংগঠন ইউএসএ-বিডি বিজনেস লিংকের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী বিশ্বজিত সাহা অনুষ্ঠান সঞ্চালনার সময় এ আয়োজন সম্পর্কে বলেন, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে আমরা নিউইয়র্ক স্টেটের কাছে আবেদন করি, দিনটিকে বাংলাদেশী অভিবাসী দিবস হিসাবে ঘোষণা করার জন্য। স্টেট সিনেটর স্টেভেসকি আবেদন করলে তা সর্বসম্মতি ক্রমে পাশ হয়। সেই থেকে আমরা দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে দুই দেশের সরকারের প্রতিনিধি দল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ব্যবসায়ী এবং নানা পেশাজীবী মানুষদের নিয়ে দিনটি উদযাপন করি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাণিজ্যমেলার স্টল গুলো পরিদর্শন করেন। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। অভিবাসী এবং ব্যবসায়ীদের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ড. মোমেন বলেন, প্রবাসীদের বাংলাদেশের উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত করা, তাদের সমস্যা এবং সুবিধার কথা আলোচনা করার জন্য এমন আয়োজন সুযোগ তৈরি করে দেয় । তাতে করে সমস্যাগুলোর সমাধানের সূত্রপাত করা যায়।

প্রথম দিন মেলা উদ্বোধন করার পর বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, রাজনৈতিক কোন সিদ্ধান্ত ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না। এই আয়োজনের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক শক্ত হলো। কিভাবে বাংলাদেশ হতে রপ্তানি বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করা এখন আরো সহজ হবে।

আয়োজক সংগঠন গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জেফি বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এটা আরও বাড়ছে। দিনদিন দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং আইসিটি পণ্য আমদানী করার বিষয়টি উঠে আসছে এই আয়োজনে। এই আয়োজনের মাধ্যমে অন্তত ৫ লাখ ডলারের বাণিজ্যিক আদান-প্রদান হবে বলে আমরা আশা করছি। এ বাণিজ্য মেলায় যারা অংশ নিয়েছেন অথবা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের ব্যবসায়িক পণ্য এবং অন্যান্য তথ্য আমরা আমাদের ৩৫ হাজার উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেব।

এ আয়োজনের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক আইএফআইসি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও, শাহ এ. সারওয়ার বলেন, আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী বিষয় নিয়ে হয়েছে নয়টি সেমিনার এবং সিম্পোজিয়াম। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দল। আমরা চাই এমন আয়োজন এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বৈধ ভাবে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবাহ বাড়ুক। এজন্য আমরা নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত চারটি বরোতে রেমিট্যান্স রোড শো এর আয়োজনও করছি।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর মশিউর রহমান বলেন, এখানকার আলোচনায় প্রবাসীদের জন্য যে সকল সমস্যা চিহ্নিত হবে তা সমাধানের জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে আলাপ করব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডক্টর আতিউর রহমান আলোচনা পর্বে নানান সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমেরিকা এবং বাংলাদেশের শতাধিক স্টল এখানে অংশগ্রহণ করেছে। আয়োজনটি ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশী তরুন উদোক্তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। তাদেরকে বাংলাদেশের বিনিয়োগে উৎসাহী এবং সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

এ আয়োজনের আহ্বায়ক ডাক্তার জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, সারা বিশ্ব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স গ্রহীতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক। হয়েছে রেমিটেন্স বিষয়ক পৃথক মেলা ও সেমিনার। দশ সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরককে দেয়া হয়েছে বিশেষ বিশেষ সম্মাননা সার্টিফিকেট । আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে বৈধভাবে রেমিটেন্স পাঠানোতে অভিবাসীদের সহযোগিতা করার জন্য সোনালী এক্সচেঞ্জ, স্ট্যান্ডার এক্সপ্রেস, প্লাসিড এক্সপ্রেস এবং সানমান গ্লোবাল এক্সপ্রেসকে দেয়া হয় বিশেষ সম্মাননা।

বাংলাদেশ অভিবাসী দিবস এবং বাণিজ্য মেলা উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশ করা হয় গ্লোবাল বিজনেস নামে একটি ম্যাগাজিন। ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক নুরুল বাতেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সকল অতিথির হাতে এটি তুলে দেন। মেলায় ফ্যাশন শো-র মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বাংলাদেশী পোশাক প্রদর্শন করা হয়।

বিশ্বজিত সাহা বলেন, এই মেলার পাশাপাশি, প্রথম দিনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা, স্মার্ট বাংলাদেশে, স্মার্ট বিনিয়োগ, মহামারী পরবর্তী নিউইয়র্ক কীভাবে সফলভাবে পুনর্নির্মাণ করা যায়, ব্যাংকিং এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দ্য ইন্টারপ্লে , যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সম্ভাব্য রপ্তানির সুযোগ উন্মোচন করা, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব: একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ: এশিয়ার পরবর্তী আইটি হাব শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি: সম্ভাবনা এবং অগ্রগতি, বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ: বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, বাংলাদেশি আমেরিকানদের জন্য সম্ভাব্য ব্যস্ততা ও বিনিয়োগের সুযোগ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর: বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি ও বাংলাদেশি অভিবাসী দিবসের মতো সেশন ছিল, তিনি যোগ করেন।

বিশ্বজিত সাহা আরো জানান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সেরা রেমিট্যান্স রিসিভার ব্যাংক হিসাবে পুরস্কার পেয়েছে এবং আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি সেরা অংশীদার হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে।

সুনম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেস কর্পোরেশন, প্লাসিড এক্সপ্রেস এবং টেপ টেপ সেন্ড শীর্ষ মানি এক্সচেঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে।

আরো পড়ুন : ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার নামাজের সময়সূচি

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *