বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বাড়িতে মুকেশ আম্বানি, ছিলেন দুই কামরার বাড়িতে

অর্থনীতি প্রচ্ছদ বিনোদন শিল্প প্রতিষ্ঠান সফলতার গল্প

বর্তমানে ভারতের অন্যতম সেরা শিল্পপতি হলেও একসময় খুব সাধারণ জীবনযাপন ছিল আম্বানি পরিবারের। কিন্তু ধীরুভাইয়ের কিছু করে দেখানোর জেদের কারণেই রিলায়েন্সের বিশাল সাম্রাজ্যের উত্থান। অনিল ও মুকেশ আম্বানিরা এখন বিলাসবহুল বাড়িতে থাকলেও বা বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হলেও একটা সময় তাঁরা দুই কামরার এক বাড়িতে থাকতেন।

এরপর আম্বানি পরিবারের নতুন ঠিকানা হয় কোলাবার সি উইন্ড নামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট।

১৬ বছর আগে ২০০২ সালে হঠাৎ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ধীরুভাই। মারা যাওয়ার আগে সম্পদের ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দিয়ে যেতে পারেননি তিনি। তাই সম্পত্তির দখল নিয়ে মুকেশ ও অনিল দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের শুরু তখনই। ধীরুভাইয়ের মৃত্যুর পর সম্পত্তির দখল নিয়ে দুই ভাই আইনি লড়াইয়েও জড়িয়ে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের মা কোকিলাবেন আম্বানির মধ্যস্থতায় ২০০৫ সালে দুই ভাইয়ের মধ্যে রিলায়েন্স সাম্রাজ্য ভাগ হয়ে যায়। তেল, গ্যাস, পেট্রো রসায়ন এবং তেল শোধনসংক্রান্ত ব্যবসার দায়িত্ব নেন মুকেশ। অন্যদিকে অনিলের হাতে যায় নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ ও জ্বালানি খাত।
শুরুটা ভালো ছিল না মুকেশের। ২০০৫ সালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। তাই সেভাবে লাভ করতে পারেনি পেট্রো কেমিক্যালস সংস্থা। একটু পিছিয়েই পড়ছিলেন তখন মুকেশ। অন্য দিকে মুঠোফোনের বাজার তখন তুঙ্গে। এই সেক্টরে তখনো মুকেশের কোনো ভূমিকা ছিল না।

যদিও ২০১০ সালে ফোনের বাজারে বিনিয়োগ করেন মুকেশ আম্বানি। তৈরি করেন রিলায়েন্স জিও ইনফোকম। ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে শুরু করেন ফোর-জি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ। তাতে বদলে যায় ভারতের ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থার সামগ্রিক পরিকাঠামো।
প্রাথমিক ধন্দ কাটিয়ে ২০১৬ সালে এই বিনিয়োগের সুফল পেতে শুরু করেন মুকেশ আম্বানি। লাভ করতে শুরু করে রিলায়েন্স জিও। ধীরুভাইয়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন মুকেশ আম্বানি।
২০১৭ সাল থেকে বিদ্যুৎ গতিতে উত্থান শুরু হয় মুকেশ আম্বানির। এই সময় থেকে তাঁর সম্পত্তি বাড়তে থাকে উল্কাগতিতে। বর্তমানে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর একজন।
একই সময়ে পতন শুরু হয় অনিল আম্বানির। বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে নিজের কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। তাঁর কোম্পানির শেয়ারের দামও পড়তে থাকে হুড়মুড়িয়ে। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণই তাঁর মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলেন না কেউ। যদিও ছোট ভাইয়ের থেকে এখন বেশ কয়েক কদম এগিয়ে বড় ভাই। এশিয়ার সব থেকে ধনী হিসেবে যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন মুকেশ, তখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে নেমেছেন অনিল আম্বানি।

বিভিন্ন সূত্রের দাবি, দুই ভাইয়ের মধ্যে ব্যবসা নিয়ে বিবাদ শুরু হতেই কোলাবার অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মুকেশ আম্বানি। ২০১০-এ বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বাড়ি ‘অ্যান্টিলিয়া’র নির্মাণ করেন মুকেশ। ২৭ তলার সেই বাড়িতে ২০১৩ থেকে থাকা শুরু করেন মুকেশ ও তাঁর পরিবার।
অ্যান্টিলিয়া গড়ে উঠেছে ৪ লাখ বর্গফুট জমির ওপর। এই বাড়িতে রয়েছে ৩টি হেলিপ্যাড, ১৬৮টি গ্যারেজ, একটি বলরুম, দ্রুতগতিসম্পন্ন ৯টি লিফট, ৫০ আসনের থিয়েটার, সুইমিংপুল, স্পা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মন্দির, স্নো রুম ইত্যাদি।

গত বছরের নভেম্বরে লন্ডনের বাকিংহামশায়ারের স্টোক পার্কে ৫৯২ কোটি টাকা দিয়ে আরও একটি বাড়ি কেনেন মুকেশ আম্বানি। নতুন ওই প্রাসাদে রয়েছে ৪৯টি ঘর, একটি ছোট হাসপাতাল, পাঁচতারা মানের হোটেল এবং তিনটি রেস্তোরাঁ। এ ছাড়া রয়েছে ১৩টি টেনিস কোর্ট এবং ২৭ হোলের গলফ কোর্স। লন্ডন শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের ৯০০ বছরের প্রাচীন এই প্রাসাদ আগে বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হলেও ১৯০৮ সাল থেকে কান্ট্রি ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবসায় ঢুকে প্রতিযোগীদের বেহাল করে দিয়েছিলেন মুকেশ আম্বানি। এবার তিনি নামছেন হোটেল ব্যবসায়। তেল, টেলিকম, টেক্সটাইলের ব্যবসায়ী মুকেশ তাঁর সাম্রাজ্যের গণ্ডি সম্প্রতি কিছুটা বাড়িয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতেই দখল করেছেন নতুন সম্পদ।

দুই কামরার বাড়ি থেকে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল বাড়িতে মুকেশ আম্বানি

নিউইয়র্কের বিলাসবহুল হোটেল ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল ২৭ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে কিনে নিয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। নতুন হোটেল কিনতে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছেন আম্বানি।

মুকেশ আম্বানি যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক সিদ্ধান্তের বদৌলতে তিনি আজ এ জায়গায় এসেছেন। এমনকি কোভিডের মধ্যে গত দুই বছরে তাঁর সম্পদ অনেক বেড়েছে।

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *