বামনা(বরগুনা) প্রতিবেদক: বরগুনার বামনা উপজেলার লক্ষীপুরা গ্রামের ত্রিমুখী বাজার সংলগ্ন এলাকার মেসার্স ইরা ব্রিক্স থেকে ইট ক্রয়ের জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেক ক্রেতা। ভাটা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে টাকা নিলেও ক্রেতাদের ইট না দিয়ে বছরের পর বছর ঘুরানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় ওই ভাটার মালিক ও কর্মচারীদের হামলার শিকার হয়েছেন ক্রেতারা।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী বামনা উপজেলা লক্ষীপুরা গ্রামের মোঃ নুরুল ইসলাম খানের ছেলে নিজাম উদ্দিন হারুন খান(৩৮) বাদী হয়ে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩০ মার্চ(বৃহস্পতিবার) মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে রিপোর্ট করার আদেশ প্রদান করেন। মামলায় আসামীরা হলো উপজেলার লক্ষীপুরা গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে মেসার্স ইরা ব্রিকস এর পরিচালক মোঃ কবির হোসেন(৫২), মৃত আঃ রশিদের ছেলে মেসার্স ইরা ব্রিকস এর ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ(৪৫), মৃত কাঞ্চন আলী আকনের ছেলে কামরুজ্জামান ইদ্রিস(৪২), মোঃ কালাম আকন(৪৫), মোঃ বাবুল আকন(৫০)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২৯ মার্চ(বুধবার) বামনা উপজেলার লক্ষীপুরা গ্রামের ইরা ব্রিক্সের অফিস কক্ষে ইট ক্রয়ের জন্য অগ্রীম টাকা দেওয়া ক্রেতারা তাদের পাওনা টাকা অথবা ইট চাইতে গেলে ভাটার বর্তমান পরিচালক মো. কবির হোসেন ইট ও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতান্ডার সৃষ্টি হলে ভাটা কর্মচারীদের হামলার শিকার হয়ে পাওনাদার ক্রেতারা গুরুতর আহত হয়। এসময় তাদের ব্যবহৃত মটরসাইকেল ভাটা কর্তৃপক্ষ ভাংচুর করেন। এঘটনায় উভয় পক্ষের দুজন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতরা হলেন, ক্রেতাদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন হারুন খান ও ভাটার কর্মচারী মো. রাজ্জাক আহত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ইরা ব্রিক্সের একসময়ের বিক্রয় সহকারী হিসাবে কর্মরত ছিলেন ওই গ্রামের নিজাম উদ্দিন হারুন খান। ভাটার পরিচালক মো. কবির হোসেন তাকে দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ইট বিক্রি করাতেন। বর্তমানে তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ কারণে নিজাম উদ্দিন হারুন খানের মাধ্যমে অগ্রিম বিক্রি করা ইট ক্রেতাদের ফেরত দিচ্ছেনা পরিচালক মো. কবির হোসেন।
আরো জানাগেছে, বছরের পর বছর ধরে নিজাম উদ্দিন হারুন খানের মাধ্যমে বিক্রি করা অগ্রিম ইটের টাকা ও ইট ফেরত না দেওয়ায় ক্রেতারা হারুন খানের কাছে পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবী জানিয়ে আসছেন। তার প্রেক্ষিতে গত ২৯ মার্চ হারুন খান সকল ক্রেতাদের নিয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে পরিচালক কবির হোসেন ও তার কর্মচারীরা ক্রেতাদের ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে হামলা চালায়।
এঘটনায় নিজাম উদ্দিন হারুন খান বাদী হয়ে ভাটা পরিচালক মো. কবির হোসেনসহ ৫জনকে আসামী করে বরগুনা আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন।
ইরা ব্রিক্স থেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে ইট ক্রয় করেও ইট না পাওয়া বুকাবুনিয়া গ্রামের মো. আফজাল মল্লিক জানান, ২০২১ সালে তিনি হারুন খানের মাধ্যমে ইরা ব্রিক্সের অফিসে গিয়ে পরিচালক মো. কবির হোসেন এর কাছে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ১(এক) লাখ ইট ক্রয় করেন। কিন্তু তার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর তাকে কোন ইট দেয়নি ভাটা কর্তৃপক্ষ। পরের বছরও তাকে ইট না দিলে তিনি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ভাটায় যান। সেখানে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত দেন সম্পুর্ন টাকা বা ইট না দিতে পারলে ওই টাকার মুনাফা হিসাবে ১০ হাজার ইট দেওয়া হবে। ওই বছর তার টাকার মুনাফা হিসাবে ১০ হাজার ইট প্রদান করে ভাটা কর্তৃপক্ষ। কিন্ত বর্তমান বছরে তারা কোন ইট বা টাকা না দেওয়ায় তিনি পুনরায় পরিচালকের কাছে যান। পরিচালক তাকে জানায় টাকা হারুন খানের মাধ্যমে দিয়েছেন। আপনাকে টাকা বা ইট সে দিবে। ভাটা মালিক তাকে আর কোন টাকা দিতে পারবে না।
এদিকে পাশ্বর্বর্তী কাঠালিয়া উপজেলার জাফর মল্লিকের স্ত্রী খুশি বেগম জানায়, তিনি ২০১৩ সালে ইরা ব্রিক্সের কাছে ইট ক্রয়ের জন্য অগ্রিম ৫(পাঁচ) লাখ টাকা দেয়। অদ্যবধি তিনি তার টাকা বা ইট কোনটাই ফেরত পায়নি। উপরন্তু ওই টাকা ফেরত চাওয়ায় ভাটা কর্তৃপক্ষ তার স্বামী জাফর মল্লিকের নামে মিথ্য মামলা করেন।
ঘটনার ভুক্তভোগী ও এক সময়ের ভাটা পরিচালকের ঘনিষ্ট সহচর নিজাম উদ্দিন হারুন খান জানায়, ২০২১ সালে তার নিকট আত্মীয় মো. কবির হোসেন ভাটা পরিচালনার দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর তার মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়ে ইট বিক্রি করাতেন। এখন তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তার মাধ্যমে অগ্রিম টাকা নিয়ে ইট ক্রয় করা ক্রেতাদের কোন ইট অথবা টাকা ফেরত দিচ্ছেনা। পাওনাদার প্রতিদিন তার কাছে টাকা ফেরত চাওয়ায় তিনি গত ২৯ মার্চ কয়েকজন ক্রেতাদের নিয়ে ভাটায় যান। সেখানে তাকেসহ ক্রেতাদের দেখেই পরিচালক কবির হোসেন ও ভাটার কর্মচারীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। নিজেরা অফিস ভাংচুর করে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
বামনা মাদীনাতুল উলুম রাজ্জাকিয়া কারীমিয়া হাফিজিয়া কওমী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোঃ হারুন অর রশীদ মাদ্রাসার জন্য ২০১৭ সালে ৪০(চল্লিশ) হাজার ইটের আগ্রীম টাকা ইরা ব্রিক্সের মালিকের কাছে দিয়েছে। তাকে ইট না দেয়াতে তিনি বরগুনা-২ আসনের জাতীয় সংদস সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন এবং বামনা থানায় অভিযোগ করলে মাত্র ১০(দশ) হাজার ইট দিয়েছে। বাকী ৩০(ত্রিশ) হাজার ইট ইরা ব্রিক্সের পরিচালক মো. কবির হোসেন এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেয়নি।
এদিকে অভিযুক্ত ইরা ব্রিক্সের পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, নিজাম উদ্দিন হারুন খান এক সময়ে তার ব্যবসায়িক সহযোগী হিসাবে কাজ করতো। হারুন কৌশলে ভাটা থেকে প্যাড ও মানি রিসিভ সরিয়ে জাল স্বাক্ষর দিয়ে ইট বিক্রি করেছেন। তার বিক্রিত ইটের টাকা ভাটায় জমা না হওয়ায় তারা ওইসব ক্রেতাদের ইট দিচ্ছেন না।
আরো পড়ুন : রমজান মাসের অন্যতম ফজিলত ও মর্যাদাসম্পন্ন একটি ইবাদত তারাবির নামাজ