বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ৬৭০ জন আফ্রিকান নাগরিক নিয়ে বিপাকে পুলিশ

আইন-আদালত আন্তর্জাতিক ওকে নিউজ স্পেশাল ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ তথ্য-প্রযুক্তি পুরুষ প্রচ্ছদ প্রবাস হ্যালোআড্ডা

প্রতারণার লাগাম টানা যাচ্ছে না দেশে অবস্থানরত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অবৈধ নাগরিকদের। ট্যুরিস্ট, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়, ছাত্রসহ নানারকম ভিসা নিয়ে আফ্রিকার পুরুষ ও নারীরা বাংলাদেশে আসছেন। তাদের কেউ কেউ নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দেশে ফিরে যাচ্ছেন না। এমন অবৈধ নাগরিকদের পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিনে বের হয়ে এসে আবার অপরাধে জড়াচ্ছেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখার (সিআইডি) পক্ষ থেকে ৬৭০ জন আফ্রিকান বিভিন্ন দেশের নাগরিকের তালিকা করা হয়েছে যারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা একাধিকবার জেলেও গেছেন। তারা এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই প্রতারক চক্র অবৈধভাবে অনলাইনে প্রতারণা, বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা লুট, এটিএম কার্ড জালিয়াতি, জাল মুদ্রা, হুন্ডি, মাদক কারবার, মুদ্রা পাচার, ফেসবুকে উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণা, লটারি পাওয়ার লোভ দেখানো, হেরোইন, কোকেন ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, জাল ডলার কারবার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, অনলাইনে ক্যাসিনো ও মানব পাচারে জড়িয়ে যাচ্ছে। এই চক্রের সদস্যরা কেউ কেউ বিয়ে করেছে বাংলাদেশে। কেউ করছে চাকরিও।

এ বিষয়ে সিআইডি’র সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের এসপি (মানব পাচার) মো. নজরুল ইসলাম জানান, আফ্রিকান নাগরিকেরা ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতারণার কাজে জড়িত। এ সংক্রান্ত মামলা সিআইডি’র কাছে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে নাইজেরিয়ার ২ হাজার ৬৮ জন, সোমালিয়ার ১ হাজার ১০ জন, কেনিয়ার ৭৯ জন, ক্যামেরুনের ৮২ জন, মালির ১০ জন, ঘানার ২০ জন, সেনেগালের ১১২ জন, লাইবেরিয়ার ১১২ জন ও চাদের ১৮ জন নাগরিক অবস্থান করছেন। এই সব নাগরিক অধিকাংশই অনেক আগেই অবৈধ হয়ে গেছেন। কারণ তাদের অনেক আগেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত ২৭শে আগস্ট রাজধানীর কাওলা থেকে সিসম, মরো মোহাম্মদ, মরিসন, অ্যান্থনি নামে নাইজেরিয়া ও ঘানার চার নাগরিককে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাদের কাছে কোনো পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। তারা ফেসবুকের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

সূত্র জানায়, আফ্রিকার একাধিক দেশের বাংলাদেশে দূতাবাস নেই। অনেক প্রতারক ভারতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে দেশে এসেছে। এতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে ফেরত পাঠাতে বা তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে সমস্যায় পড়েন। এইসব প্রতারক চক্র বছরের পর বছর দেশে কাটিয়ে দিচ্ছে। চক্রটির সদস্যরা রাজধানীর উত্তরা, নিকুঞ্জ, গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি ও বনশ্রীতে বসবাস করে থাকে।

পুলিশ জানায়, মালির দামালা নামের এক নাগরিককে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা একটি টিম গ্রেপ্তার করে। তার কাছে কোনো পাসপোর্ট ছিল না। সে এর আগেও তিনবার জেলে গেছে। পরে দালালদের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছে। এমনকি আদালতকেও সে বলেছে, সে দেশে ফেরত যাবে। দেশে ফেরত যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হলফনামাও জমা দিয়েছে। কিন্তু, আর দেশে ফেরত যাননি। ওই নাগরিক এখনো দেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এই অবৈধ নাগরিকদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করার পরও নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় না। কারণ, তাদের অপরাধ তদন্ত করতে গিয়েও নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদেও তারা কোনো মুখ খুলে না। এ কারণে গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয়া যায় না। কয়েক বছর আগে ঢাকায় ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে পান্থপথের একটি হোটেল থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ৬ ইউক্রেনীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা নিজ দেশে পালিয়ে যায়।

আরো পড়ুন : জেনে নিন কোন কারণে ব্যালটের ভোটে ফিরলো ইসি

 

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *