খুনের মামলা থেকে বাঁচতে সাধারন মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা চাঁদা শাহিন তৌহিদুলের

অনুসন্ধানী ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ পুরুষ প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক অপরাধ করে আসা শাহিন-তৌহিদুল এখন বিপাকে। তাদের টর্চার সেলে আমিনুরকে তুলে এনে হত্যার পর এই প্রথম গা ঢাকা দিয়েছে শাহিন-তৌহিদুল বাহিনী। তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রামের সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন। শাহিন-তৌহিদুল বাহিনীর ভয়ে দীর্ঘদিন নিজের ঘরবাড়ি ছাড়া মানুষগুলো একে একে ফিরতে শুরু করেছেন। ভয়-শঙ্কা উপেক্ষা করে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। আমিনুর খুনের পর শাহিন-তৌহিদুল আলোচনায় আসে। তবে গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও তাদের প্রেতাত্মা এখনো লক্ষ্মীপুর গ্রামে ইথারের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। শাহিন-তৌহিদুল পর্দার আড়ালে থেকেও ইতিমধ্যেই কোটি টাকার চাঁদা আদায়ের বাজেট ঘোষণা করেছে। আমিনুর খুনের মামলা খেয়ে ফেলতেই তাদের এই বাজেট। কোটি টাকা সংগ্রহ করতে এবার মামলার ৩৭ আসামিকে বেছে নিয়েছে তারা।

আরো পড়ুন : শাহিন-তৌহিদুল বাহিনীর ভয়ে গ্রাম ছাড়া সবাই; মাটির ক্লাব ঘর আদালতে খুন করা হয় আমিনুরকে

দুই লিডার বাদে অপর ৩৫ আসামি এখন মূল টার্গেট। কোটি টাকার অর্ধেক তাদের কাছে বাকি অর্ধেক গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে তারা। খুনিদের অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে কোটি টাকার বাজেট নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা বলে বেড়াচ্ছেন বাদীকে ৩০ লাখ, স্থানীয় নেতা, মন্ত্রী-পুলিশ ৪০ লাখ এবং বাকি ৩০ লাখ মিডিয়া আইনজীবীর জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। তাদের এই বাজেট ঘোষণা নিয়ে এখন কানাঘুষা চলছে। অসহায় মানুষগুলোর কাছে নানাভাবে চাঁদা দেয়ার জন্য হুমকি প্রদান শুরু করেছে।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়নের আলোচিত সেই লক্ষ্মীপুর গ্রামের ডাকাতদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পর গ্রামের মানুষের মধ্যে আশার আলো জ্বলে উঠেছে। তারা কিছুটা অভয় পাচ্ছেন সংবাদ প্রকাশ হওয়ার ফলে। তাদের বিশ্বাস মিডিয়ার মাধ্যমেই এসব ডাকাত সন্ত্রাসদের নির্মূল করা সম্ভব।

ওই গ্রামের বাসিন্দা সাবিনা ইয়াসমিন। তার স্বামী বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরি করেন। ওই বাহিনী তার স্বামীকে তুলে নিয়ে টর্চার সেলে ব্যাপক মারপিট করে। মার খাওয়ার পরেই তারা গ্রাম ছেড়ে আদমদীঘিতে চলে যায়। সেখানে বাসাভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আছেন। শাহিনদের ভয়ে তারা গ্রামে ঢুকতে পারতো না। তাদের ফল ফসল সব কিছুই জোরপূর্বক নিয়ে যেতো শাহিনরা। আমিনুর হত্যার কয়েকদিন আগে সাবিনার গাছের প্রায় ১০ মণ বেল পেড়ে নিয়ে গেছে তারা।

লক্ষ্মীপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ফুলবানু। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কোলে তার শিশু নাতিকে নিয়ে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসেন। মনের ভিতর লুকানো অনেক কথা। সেসব কথার মধ্যে কিছু বলার চেষ্টা করেন । তার ছেলে কোভিড চলাকালে টিকা দেয়ার জন্য শহরে যায়। সেখানে টিকা দিয়ে শাহিন-তৌহিদুলদের বাড়ির উপর দিয়ে হেঁটে আমাদের বাড়ি আসছিল। এমন সময় শাহিন-তৌহিদুল বাহিনীর সদস্য আরিফ এবং মহসিন আমার ছেলেকে একা পেয়ে তুলে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। তারপর আমি আমার ছেলেকে আর বাড়িতে থাকতে দেইনি। দীর্ঘদিন ধরে আমার ছেলে বাড়ি ছাড়া। আমি বৃদ্ধা মানুষ বাড়িতে একাই থাকছি এখন। এ বয়সে আমি সন্তানদের সঙ্গে থাকতে পারিনি। ওই ডাকাতেরা এখন নাই। এজন্য কয়েকদিন আগে আমার ছেলে বাড়িতে এসেছে। আমি এই ডাকাতদের বিচার চাই। এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কথা হয় ওই গ্রামের ওয়াজকুরুনির সঙ্গে। আমাদের সাংবাদিক টিমকে তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন। কিছুদিন আগে ওই বাড়িতে হামলা করে শাহিনরা। ডাকাতদের হাত থেকে সতর্ক থাকতে তিনি বাড়ির চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছেন। হামলার পুরো দৃশ্য তিনি আমাদের দেখালেন। এ সময় তিনি বলেন, এরা এখন খুনের মামলা থেকে রক্ষা পেতে কোটি টাকা চাঁদা তোলার পরিকল্পনা করেছে। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তারা গ্রামের অসহায় মানুষদের থেকে সেই টাকা তোলার চেষ্টা করছে। এতবড় একটা খুনের ঘটনা ঘটলেও লাশ দাফনের পর আর এই গ্রামে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো কি অবস্থায় আছে তা দেখার জন্য পুলিশের খোঁজ নেয়া উচিত ছিল। সাধারণ মানুষের বিপদে পাশে থাকা উচিত ছিল। গ্রামের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি পুলিশের প্রতি অনুরোধ করেন।

আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা জানান, এসব বিষয়ে আমাদের কাছে আপাতত কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মূল আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।

আরো পড়ুন : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন করবে না বিএনপি

 

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *