স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ফায়ার সার্ভিস ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে রক্ষা পেতো অধিকাংশ দোকান। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করেন ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশের পক্ষ থেকে।
বঙ্গবাজারের ঠিক উল্টো দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর। গতকাল সকাল ৯টার দিকে হামলা করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ইটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিল্ডিংয়ের দেয়ালের কাচ, কন্ট্রোল রুম ও কয়েকটি গাড়ি। এ ছাড়াও অন্তত ৪ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। বিক্ষুব্ধ জনতাকে সদর দপ্তর থেকে সরিয়ে দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিক্ষেপ করা হয় টিয়ারসেল।
ফায়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে কেন এই অভিযোগ? মাসুম শিকদার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, সকালে আমি আদর্শ মার্কেটে গিয়া দেখি একজন নিরাপত্তাকর্মী তর্কাতর্কি করছে। নিরাপত্তাকর্মী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বলছেন, আপনারা পানি উপরে মারেন কেন? আগে যে জায়গায় আগুন লাগছে সেই জায়গায় মারেন। তিনি বলেন, আমি কাপড় নামাইতাছি, আর দেখতাছি আগুন লাগতাছে।
ফায়ার সার্ভিসের ভাইরে কই, পানি মারেন না কেন? তারা কয়, পানি নাই, পানি শ্যাষ। তারা কি জানে না এই বঙ্গবাজারে কতো মানুষের রুটি রুজি? আজ সব মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। সমস্ত গার্মেন্টেসের এই বঙ্গবাজারের সঙ্গে কানেকশন। এটার পেছনে কোনো ইন্ধন আছে কী না খোঁজ নেয়ার দাবি জানাই। ফায়ার সার্ভিসের অনেক অবহেলা আছে। তারা যদি সুন্দরভাবে কাজ করতো ৫০টা দোকান পুড়তো, ১০০টা দোকান পুড়তো। পুরো মার্কেট পুড়তো না। তারা একটা দোকান বাঁচাইতে পারে নাই। ফায়ার সার্ভিসের নাকের ডগায় লাগা আগুন নেভাইতে পারলো না।
লিটন মাঝি নামে এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, এরা আগুন না নিভাইয়া দাঁড়াইয়া থাকে, ভিডিও করে। এখন ৫০ হাজার লোক পথে বসে গেছে। ফায়ার সার্ভিস তাকায় তাকায় দেখছে। ওরা কিছু করে নাই। আমার ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রথমে মার্কেটের এক কোণায় আগুন লাগে। ওই সময় আগুনের বেগ বেশি ছিল না। প্রথম থেকেই চেষ্টা করলে কয়েকটা দোকান পোড়া যাইতো কিন্তু পুরো মার্কেট ধ্বংস হতো না। ফায়ার সার্ভিস ভেতরে ঢোকে না। বাইরে দাঁড়াইয়া আগুন দেখছে। এক কোণার আগুন আরেক কোণায় গেল কীভাবে? এটা আমার প্রশ্ন। আমাদের চোখের সামনে ফায়ার সার্ভিস হেডকোয়ার্টার। তারা কি করলো?
পারভেজ আউয়াল ও মিরাজ পাটওয়ারী নামে দু’জন ব্যবসায়ী বলেন, ফায়ার সার্ভিস মাঝে মাঝে এই মার্কেটে আগুন নেভানোর মহড়া দেয়। তাহলে কী মহড়া দিলো তারা? আসলে তাদের ইচ্ছা ছিল না নেভানোর। এখানে ৪টা মার্কেট আছে। তারা একটা মার্কেট রক্ষা করে দেখাতো যে কাজ করছি। ফায়ার সার্ভিসের লোকদের জিগাইলে কয়, পানি নাই।
এই দুই ব্যবসায়ী বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলে, ভেতরে যাওয়া যাবে না রিস্ক আছে। আমরাও মানি রিস্ক ছিল। কিন্তু আপনারা কী করলেন? একটা দোকান বাঁচাইতে পারলেন না। আমরা সম্পূর্ণ দোষ দেই ফায়ার সার্ভিসকে। আমরা না হয় রিস্ক নিয়া ক্যাশ টাকাটা আনতাম। আপনি যদি হেডকোয়ার্টারের পাশে আগুন থেকে রক্ষা করতে না পারেন তাহলে কোথায় পারবেন?
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা তো আপনাদের জন্য জীবন দিচ্ছি। ফায়ার সার্ভিসের অফিসার থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত সবাই জীবনবাজি রেখে প্রথমে এগিয়ে আসি। এরপরও কেন ফায়ার সার্ভিসের উপরে আঘাত আনা হলো; তা আমার বোধগম্য নয়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বঙ্গবাজারে লাগা আগুনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আপনারা দেখেছেন কী অবস্থা, এখানে হাজার হাজার মানুষ। তারপরও হামলার খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই গিয়েছি, এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। জড়িতদের চিহ্নিত করে পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো পড়ুন : নির্বাক হয়ে পুড়ে ছাই হতে দেখেছেন দেনা আর ঋণের টাকার দোকানগুলো