স্টাফ রিপোর্টার : বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের অনুদানে বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার ফান্ড বড় হচ্ছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত একজন এমপি, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই ও ভোক্তা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি অনুদান দিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে আইএফআইসি ব্যাংকে খোলা অ্যাকাউন্টেও অর্থ পাঠিয়েছেন অনেকে। সবমিলিয়ে একদিনে অ্যাকাউন্টে প্রায় ২ কোটি টাকা যোগ হয়েছে। এদিকে বঙ্গবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা গতকাল দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আগামী বুধবারের মধ্যে পোড়া ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সেখানে অস্থায়ীভাবে বসতে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ধ্বংসস্তূপ দ্রুত সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। মেয়র নিজে উদ্বোধন করে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার ব্যবস্থা করে দিবেন বলেও ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
সরজমিন গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে বঙ্গবাজারে অনুদান দিতে আসেন আলেয়া নামের এক হিজড়া। তিনি হজে যাওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা জমিয়েছেন। কিন্তু আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দুর্দশা দেখে হজে না গিয়ে ২ লাখ টাকা ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য তহবিলে জমা দেন।
সোয়া ১১টার দিকে বঙ্গবাজারে উপস্থিত হন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তার নেতৃত্বে ২৬ লাখ টাকা জমা দেয়া হয় তহবিলে। এ সময় এমপি বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম ১০ লাখ টাকা দিবো। কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করেছিলাম তোমরাও ১০ লাখ টাকা দাও। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বললাম তুমিও ৫ লাখ টাকা দাও। আমরা ২৫ লাখ টাকা তাৎক্ষণিক ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের প্যানেল মেয়রও ১ লাখ টাকা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ২৬ লাখ দিয়েছি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাদের নিজেদের এক দিনের বেতন ও ইফতারের খরচ বাবদ দুই লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনের হাতে চেক তুলে দেন।
মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের অফিসার্স ও কর্মচারী এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার জন্য আমাদের সদর দপ্তরের একদিনের বেতন ও ইফতারের খরচের ২ লাখ টাকা তুলে দিয়েছি।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ লাখ টাকা সহায়তা করেন হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থা থেকে এই অনুদান দেয়া হয়।
সংগঠনটির সভাপতি কাশ্মির দিপালী হিজড়া সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি। আজকে তাদের এই বিপদের সময় আমরা আমাদের এবারের ঈদের কেনাকাটা না করে আমরা আমাদের এই ব্যবসায়ী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। সারা দেশ থেকে ২০ লাখ টাকা আমরা তুলেছি। সেই টাকা আজ তাদের কাছে দিতে এসেছি। তারা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবো।
গুরু মা রাখি শেখ বলেন, আমরা মানুষের কাছ থেকে এক-দুই টাকা করে উঠিয়ে উঠিয়ে এই টাকা জমিয়েছি। এখন আমরা সেটা মানবতার কল্যাণেই দিয়ে দেবো। এই টাকা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে দেয়া হবে না, পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা তহবিলে জমা দেয়া হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে এই টাকা পৌঁছানো হবে। অনুদান হস্তান্তরকালে ঢাকাসহ আশপাশের প্রায় শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরের পর পর সেখানে আসেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ১ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুদমুক্ত বা স্বল্প সুদে বিশেষ মেয়াদি ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। গতকাল সংগঠনটির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার এক বিবৃতিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়াও ডিসিসিআই সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনার জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেছেন।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল হুদা বলেন, মেয়রের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আগামী বুধবারের মধ্যে বসার সুযোগ করে দিতে চাই। তবে সেখানে যারা বসবে, তারা অস্থায়ীভাবেই বসবে। কোনো স্থায়ী দোকান হোক কিংবা স্থায়ীভাবে বসুক, তা আমরা চাইবো না। আর প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সাড়ে ৩/৫ ফুট করে চৌকির সাইজ করতে বলা হয়েছে। এতে দোকান বা জায়গা বণ্টন নিয়ে কোনো ঝামেলা হবে না।
তবে গতকালও ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৪০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও কর্মচারীর নাম এন্ট্রি করা হয়েছে, এমনটি জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেলের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন ও দোকান মালিক সমিতিও আলাদা আলাদা তালিকা করছে। সব তালিকা ক্রসচেক করার পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনুদানের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা খতিয়ে দেখবেন।
আরো পড়ুন : পরিকল্পনা ছিল ঈদ বাজারে তিন কোটি টাকার জাল নোট ছড়ানো