সিলেটে স্বর্ণ গায়েব ঘটনায় ‘মাস্টারমাইন্ড’ কামরুল গ্রেপ্তার

অর্থনীতি ক্রাইম নিউজ দুর্নীতি পুরুষ প্রচ্ছদ প্রবাস ভ্রমণ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

১৮ই মার্চ শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকে দুবাই ফেরত চার প্রবাসী। চার জনের বাড়ি সিলেটের চার এলাকায়। দুবাইয়ের আলাইন শহরে তারা একসঙ্গে বসবাস করে। এক বছর পর ছুটি কাটাতে দেশে আসার দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর আরেক বাংলাদেশি মাহবুব আহমদ নিজের টাকায় তাদের চারজনকে ইউএস-বাংলা বিমান টিকিট করে দেন। এবং টিকিটের বিনিময়ে বৈধভাবে ৪৪ ভরি রেডি স্বর্ণ ও চারটি মোবাইল ফোন দেশে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাদের হাতে তুলে দেন। স্বর্ণ তুলে দেয়ার এ দৃশ্য মাহবুব আহমদ মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। ছিল কয়েকটি ল্যাপটপও। কিন্তু ১৮ই মার্চ তারা দেশে ঢুকেই এয়ারপোর্ট থেকে লাপাত্তা হয়ে যায়। তাদের ব্যাগেজ বিমানবন্দরে রেখেই হাতে থাকা স্বর্ণ ও মোবাইল নিয়ে চম্পট দেয়। ওই চার প্রবাসী হচ্ছে- সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজার এলাকার আব্দুল ইয়ামীন, জৈন্তাপুরের ঘাটের ছটি এলাকার ইসহাক আহমদ, জকিগঞ্জের শাহবাগের মঈদপুর গ্রামের শহীদ আহমদ ও গোয়াইনঘাটের লেঙ্গুরা এলাকার হাবিবুর রহমান।

তাদের নেতৃত্বে ছিল পুরো ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ শিবেরবাজারের বড়ফৌদ গ্রামের কামরুজ্জামান কামরুল। কামরুল কয়েকদিন আগে দুবাই থেকে সিলেটে আসে। এরপর ঘটনার দিন সে ঢাকার শাহজালাল এয়ারপোর্ট থেকে স্বর্ণ বহনকারী ওই চারকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে দেশে ফেরত চার প্রবাসীর সঙ্গে কামরুলের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ হয়। ওই দিন একই ফ্লাইটে ইয়ামীন, ইসহাক, শহীদ ও হাবিবেব সঙ্গে দুবাই থেকে একই সঙ্গে এসেছেন দুবাইয়ে স্বর্ণ প্রদানকারী ব্যক্তি মাহবুরের ছোট ভাই ইকরামুল হক নাঈম। কথা ছিল; ফ্লাইট থেকে ঢাকায় নামার পর নাঈমের হাতে স্বর্ণ তুলে দেবে ওই চারজন। কিন্তু ঘটনার দিন তারা ফ্লাইট থেকে নেমে এয়ারপোর্টে বেল্টে লাগেজ রেখেই ‘গায়েব’ হয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে রহস্যময় আচরণ ছিল কামরুলের। কামরুল হচ্ছে প্রধান আসামি ইয়ামীনের চাচাতো ভাই। দুবাইয়ে তারা একই এলাকায়, একই বাসায় বসবাস করে। ফলে কামরুলের সঙ্গে গায়েব হওয়া চার প্রবাসীর সম্পর্ক গভীর। ঘটনার পর দুবাই থেকে মাহবুব দেশে আসেন। সিলেটে এসে তারা স্বর্ণ ও মোবাইল উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে গিয়ে কামরুলের খোঁজ পান। এবং কামরুলই চারজনকে শেল্টার দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে খবর পান। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ঘটনার ক’দিনের মধ্যে জালালাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন দুবাই প্রবাসী মাহবুব আহমদ। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ বড়ফৌদ গ্রামের কামরুলের বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানের পর কামরুল নিজেই অভিযানের ‘যৌক্তিকতা’র প্রশ্ন তুলে পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দেন। এবং ঘটনার জন্য তিনি পুলিশকে দায়ী করেন। ফলে এ ঘটনায় কিছুটা পিছু হটে পুলিশ। এদিকে- গায়েব হয়ে যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধারে গত সপ্তাহে সিলেট আদালতে কামরুল সহ ৫ জনকে আসামি করে জালালাবাদ থানায় মামলা করেছে ঢাকার বনশ্রী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ইকরামুল হক নাঈম। তিনি দুবাইয়ের বাসিন্দা মাহবুবের ছোট ভাই। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন ১৮ই মার্চ ইয়ামীন, ইসহাক, শহীদ, হাবিব এক সঙ্গে একই ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন। এয়ারপোর্টে নেমে স্বর্ণ আদান-প্রদানের বিষয়টি দৃষ্টিকটু হওয়ার কারণে চারজনকেই বাড়ি যাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। এবং তারা বাড়ি পৌঁছে স্বর্ণ পৌঁছে দেয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে তারা আর স্বর্ণ ফেরত দেয়নি। সঙ্গে চারটি মোবাইল ফোন রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে মামলা দায়েরের আগে নাঈমের বড় ভাই মাহবুব আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছিলেন, স্বর্ণগুলো তিনি তার বোনের বিয়ে এবং আত্মীয়স্বজনদের জন্য পাঠিয়েছিলেন। ওই স্বর্ণগুলো বৈধ থাকার পরও বহনের পরিবর্তে চারজনকে ইউএস বাংলার টিকিট করে দেয়া হয়। কিন্তু দেশে আসার পর তারা এয়ারপোর্টের ভেতর থেকেই গায়েব হয়ে যায়। তিনি জানান, এ নিয়ে একাধিকবার কামরুল সহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই স্বর্ণ ফেরত দিচ্ছে, দেবে বলে কালক্ষেপণ করেন। পরে নানাভাবে হুমকিও দেয় বলে জানান তিনি। মামলার বাদী জানিয়েছেন, যে স্বর্ণ আনা হয়েছে সেটি বৈধভাবে আনা হয়েছে। এখানে অবৈধ কোনো কাজ নেই। কিন্তু তারা বিষয়টিকে ঘোলাটে করে স্বর্ণ আত্মসাতের চেষ্টা চালায়। আর সবই হয়েছে কামরুলের কারণে। কামরুলই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ও মূল হোতা। এদিকে- আদালতের নির্দেশে মামলা রেকর্ড করে কামরুল সহ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। গত রোববার বিকালে সিলেট শহরতলীর মইরাচর এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল আদালতে হাজির করে তার তিন দিনের রিমান্ড চেয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার এসআই মাহবুব হোসেন মণ্ডল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া কামরুলের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার নেপথ্যে সবকিছুতে কামরুলের সম্পৃক্ততা থাকলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে সব এড়িয়ে যায়। নানাভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। তিনি জানান, এ কারণে কামরুলের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন : বিএনপিতে উকিল সাত্তারের অভাব নেই, তারা তলে তলে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *