ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) একটি কালো আইন। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ আইন সংশোধন নয়, বাতিল করতে হবে।
মঙ্গলবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : অভিজ্ঞতা ও শঙ্কা’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে আলোচকরা এসব মন্তব্য করেন। ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আর্টিকেল-১৯-এর পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) ফারুক ফয়সাল, দ্য ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের (ইউএসএ) কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া। সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সমাপনী বক্তব্য দেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
শাহ্দীন মালিক আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, আমরা যে উদ্ভট এক পৃথিবীতে বসবাস করছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই আইন সংশোধন সম্ভব নয়, বাতিল করতে হবে। তিনি বলেন, কারও অনুভূতিতে আঘাতের মতো বিষয়গুলো পশ্চিমা বিশ্বে তিন শতাব্দী আগে বাতিল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় সংসদে যে আলোচনা, তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। ফলে এসব আইন নিয়ে সংসদে কী আলোচনা হচ্ছে বা আদৌ আলোচনা হয় কিনা, তা জানা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কোনো অপরাধের জন্য একটি মামলা হলেই হয়। ডিজিটাল আইনে একজনের বিরুদ্ধে দেশের নানা স্থানে মামলা হচ্ছে।
আলী রীয়াজ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। এ আইন বাতিল করতে হবে। আইনি ও আইনবহির্ভূত কাঠামোর মধ্য দিয়ে সামনে আরও ভয়াবহ সময় আসছে বলেও তিনি মনে করেন। আলী রীয়াজ বলেন, ডিএসএতে প্রতিদিন গড়ে চারজন অভিযুক্ত হচ্ছেন। আইনটির অধীনে ২১ শিশু আটক ও ২৬ শিশু অভিযুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের সুরক্ষার নামে আইনটি কতিপয় ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা দিতে তৈরি করা হয়েছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ব্যবহার-অপব্যবহার যাই হোক না কেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকাটাই সমস্যা। এটি খড়্গ হয়ে সবার মাথার ওপর আছে। প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ আরও জোরদার করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অবশ্য সরকার চাইলে যা খুশি তা করতে পারে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন না থাকলেও পারে। এ বিষয়ে তিনি ২০১৮ সালে তাঁর বাসভবনে এবং তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা নিয়ে কথা বলেন।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন মনে করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইনগুলোর প্রয়োগ নির্বাচনের বছর এলে বাড়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন ফারুক ফয়সালও। তিনি বলেন, এ ধরনের আইন দিয়ে সরকার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে এবং তা ক্রমে বাড়ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা থাকে না। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে আরও তিনটি আইন-বিধির খসড়া তৈরি হয়েছে– উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ওটিটি নীতিমালা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রবিধান।
আইনটির কোনো সংশোধন নয়, বরং পুরো আইন বাতিল চান গোলাম মোর্তোজা। তাঁর মতে, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে আইনটি নমনীয়ভাবে প্রয়োগ করা হবে– সরকারপক্ষ থেকে এ ধরনের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সাংবাদিকরা নিজেদের নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন। কেননা আইন সবার জন্য সমান। এ আইন প্রয়োগ করে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে সরকার সফল বলেও তিনি মনে করেন।
সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ডিএসএতে মতপ্রকাশকে অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হচ্ছে। মামলার শিকার হয়ে কেউ যদি দীর্ঘদিন জেল খেটে পরে নির্দোষ প্রমাণিত হন, তখন তার প্রতিকার কী হবে?
আরো পড়ুন : গাজীপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনলেন জাহাঙ্গীর আলম