একটি ‘না’ শব্দই পাল্টে দিয়েছে বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতি

নির্বাচন পুরুষ প্রচ্ছদ রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

বরিশাল ব্যুরো : একটি ‘না’ শব্দই পাল্টে দিয়েছে বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতি। কয়েক হাজার নেতাকর্মী প্রস্তুত ছিল দুপরে আনন্দ মিছিল করার। এতক্ষণে শত শত কর্মীর কলতানে মুখরিত হবার কথা ছিল কালীবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবন। কিন্তু সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ৯০ ভাগ নিশ্চিত ছিল বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচনের। কিন্তু রাজনীতি না করা আপন চাচার কাছে মনোনয়ন যুদ্ধে হেরে গেলেন তিনি। বিকাল ৩টায় দেখা গেছে কালীবাড়ি রোডের সেই বাড়িটি সুনসান নীরব। একটি কর্মীও নেই। অপরদিকে আনন্দ মিছিল হয়েছে বরিশালের কয়েকটি স্থানে। নতুন প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে মিছিল করেছেন কিছু নেতাকর্মী।

এবার আগ থেকেই আঁচ পাওয়া গিয়েছিল, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন পাচ্ছেন না।

সাবেক জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বিরোধ, ইউএনও’র বাসভবনে হামলা, দলীয় প্রতিপক্ষকে নিষ্ঠুরভাবে দমন, ট্যাক্স বৃদ্ধি, প্ল্যান পাসে চরম ভোগান্তি, ঢাকা থেকে গত ৪ বছর উন্নয়ন বাবদ একটি টাকাও বরাদ্দ না হওয়া ছিল উল্লেখযোগ্য। এবার যে ৭ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৬ জনই সাদিক বিরোধী। এর মধ্যে সাদিকের চাচা খোকন সেরনিয়াবাত ছাড়াও বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মঈন তুষার, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিমউদ্দিন, শিল্পপতি মিজানুর রহমান ছিলেন উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে জসিমউদ্দিনের উপর বেশ কয়েকবার রক্তাক্ত হামলার ঘটনা ঘটে। শিল্পপতি মিজানুর রহমানের প্রতিষ্ঠানেও হামলা হয়।

যেভাবেই হোক বরিশাল আওয়ামী লীগকে নিজের করে নিয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ। তৈরি করেছেন শত শত কর্মী। তিনি প্রকাশ্যেই বলতেন এই তরুণ কর্মীরাই তার শক্তি। কিন্তু স্থানীয় ভাষায় ‘পুরান চাল ভাতে বাড়ে’ বাক্যটি ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। নতুনদের জায়গা দিতে গিয়ে এক রকম ছুড়ে ফেলে দেন প্রবীণ নেতাদের। সেখানেও রয়ে গেছে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। বঞ্চিতরা আশ্রয় নেন পানিসম্পদমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিমের কাছে। জনবল বা শক্তিতে মেয়র পন্থিরা প্রকাশ্যে এগিয়ে থাকলেও গোপনে সংগঠিত হচ্ছিল মন্ত্রীপন্থিরা। তাদের সুযোগ করে দেয় ‘মেয়রের সঙ্গে প্রশাসনের চরম বিরোধ’ বিষয়টিকে। যা কেন্দ্রও নড়েচড়ে বসে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। বড় ছেলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। অর্থাৎ মেয়র সাদিকের আপন চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।

জানা গেছে, পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকান্ডের পর থেকে অনেকটাই আড়ালে চলে যান খোকন সেরনিয়াবাত। দলে তার নেই কোনো পদ-পদবিও। সাবেক সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পরে তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। সেই সময়ে তাকে মেয়র প্রার্থী করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন পান।

মাসখানেক আগে বরিশাল এসে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মন্ত্রীপন্থিদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। তখনই চাউর হয়, তাকে মেয়র প্রার্থী করা হচ্ছে। কিন্তু পদ-পদবি না থাকায় অনেকেই এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ক্লিন ইমেজই প্রাধান্য পায়।

এবার আওয়ামী লীগের ৭ জন মনোনয়নপত্র কেনেন। সেখানেই আসলে দেখিয়ে দেয়া হয়, বরিশালে আওয়ামী লীগের সাদিক বিরোধীদের শক্তি। শেষ মুহূর্তে সাদিক টের পেয়েছিলেন, তাকে মনোনয়ন না দেবার বিষয়টি। এ জন্য শুক্র, শনিবার তিনি ঢাকায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাশালী নেতার কাছে ধরনা দেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

আরো পড়ুন : আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে যাবেন সোহাগ, পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত সালাউদ্দিনের

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *