খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন

জনপ্রতিনিধি নারী প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক কিছু জটিলতার কারণে শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন রাতে সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারান্তরীণ। দীর্ঘদিন ধরে উনি অসুস্থ। ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত সপ্তমবারের মতো হাসপাতালে এলেন। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবারো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি কতদিন হাসপাতালে থাকবেন।

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) লিভার ও কিডনিতে জটিলতা আছে। হার্টের জটিলতা আছে। লিভারে জন্য মেডিকেল বোর্ড বিদেশে যাওয়ার জন্য পরামর্শও দিয়েছিল। কিন্তু কেন যেতে পারেননি দেশবাসী জানেন। উনার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, তা যেহেতু করা যাচ্ছে না। তাই আবারো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সার্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেবেন।

ডা. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যা যা ছিল, এখনও তাই আছে। অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাতে না যায়, সেজন্য মেডিকেল বোর্ড আলোচনা করে করনীয় সম্পর্কে চিকিৎসার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।

প্রতিকূলতার মাঝেও যাতে সঠিক চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হতে পারেন সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক ।

গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটো ব্লক এখনো রয়ে গেছে।

খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার।

কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্টও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ভর্তি করানো হয়। দুদিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

এদিকে দীর্ঘদিন পর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে-এমন খবরে দুপুর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার গুলশানের বাসার সামনে জড়ো হতে থাকেন। বাসার সামনে এবং আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যও।

প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য সেখানেও ভিড় করেন নেতাকর্মীরা। চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে হাসপাতালের সামনের সড়কে মিছিল করেন তারা। দেন সরকারবিরোধী নানা স্লোগান।

বিকাল সাড়ে ৫টায় গুলশানে ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে রওয়ানা দেন খালেদা জিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। গাড়ির সামনে-পেছনে ছিলেন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। পুরো সময় তারা তাকে কর্ডন করে রাখে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় হাসপাতালে পৌঁছান খালেদা জিয়া।

হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শিরিন সুলতানা, কামরুজ্জামান রতন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নিলোফার চৌধুরী মনি, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, যুবদলের মামুন হাসান, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ইছহাক সরকার, মহানগর বিএনপি দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ।

খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এরপর কয়েক দফা তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

আরো পড়ুন : আবারও হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *