কাওছার আহমদ, সিলেট: আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কোন নেতাকর্মী অংশ না নেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডও হার্ডলাইনে ছিল। কিন্তু কোন কিছুই থামাতে পারেনি দলের নেতাকর্মীদের। তারা সবকিছু উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছে পুরোদমে। অবশ্য বেশ কিছু‚ নেতাকর্মী নির্বাচন বয়কট করে গণমাধ্যমে প্রেসব্রিফিং করেছেন। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ অনেকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছেন। তবে সিটি নির্বাচন নিয়ে সিলেট বিএনপির ভোট গ্রহণ ও বর্জনের খেলা চলছে এক সপ্তাহ ধরে।
এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে অংশ করবেনা বিএনপি। এমন নীতিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা এলাকাগুলোয় তারা অংশগ্রহণ করেন। মূলত: বিএনপির এমন নীতির কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলটির নীতিনির্ধারকদের তেমন একটা বিশ্বাস করতে পারছেননা। আর তাই সিলেট সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে কঠোর নির্দেশনাকে পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করছেন না অনেকে।
দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত বর্তমান ৭ কাউন্সিলরের মধ্যে ৬ জনই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছেন। এই ৬ বর্তমান কাউন্সিলর হলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা বেগম শাহনাজ। এরা ছাড়াও বিএনপি এবং ছাত্রদলের আরও কয়েকজন নেতা বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সিলেট জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সভপতি আলতাফ হোসেন সুমন সোমবার জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে তার মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে এসময় তার মুখে মাস্ক পরা থাকায় গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকে তাকে চিনতে পারেন নি। দু’একজন চিনলেও তিনি তাদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। সুমনের মতো এমন আরও অনেকেই গোপনে বা আড়ালে আবডালে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।
এদিকে ১৮ মে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নির্বাচন বর্জন করেছেন।
এর দু’দিন পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর রেজিস্টারী মাঠে নাগরিক সভা ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
বিএনপির এ দু’নেতা ভোট বর্জনের পর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলের কাউন্সিলর পদ প্রার্থী অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং মহানগরের সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রচার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন বর্জন করে আমরা সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছি। নেতারা এটা বুঝতেই পারছেন না। অংশগ্রহণ করলে কারচুপি হলেও জনগনের কাছে সেটা তুলে ধরা যাবে। আমরা মাঠের কর্মী হিসেবে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
অবশ্য সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেছেন, দলের খাঁটি কোন কর্মী হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেনা। যারা দলের আদর্শকে বুকে লালন করবে তারা অবশ্যই দলের এ সিদ্ধান্ত মানবে। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব বলেন, প্রহসনের এ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। যারা সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আতাঁত করে নির্বাচনে যাবে তাদের স্থান বিএনপিতে নেই।
কাওছার আহমদ
আরো পড়ুন : ধূমপানের বিকল্প নিয়ে গবেষণার নামে ই-সিগারেটে উদ্বুদ্ধকরণ