স্টাফ রিপোর্টার-গাজীপুর : আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। প্রায় ১২ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এই নির্বাচনে। জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে হতে যাওয়া এই নির্বাচনে চোখ পুরো দেশবাসীর। নির্বাচনে দৃষ্টি রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও। এই ভোট নির্বাচন কমিশনের জন্যও কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। জাতীয় নির্বাচনের আগে বড় এই নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ করতে সব ব্যবস্থাই নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ভোটারদের খুব একটা স্বস্তি দিতে পারেনি। নানা শঙ্কা আর ভয় নিয়ে আজ ভোট কেন্দ্রে যাবেন সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ কারণে নির্বাচনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।
মূল লড়াইয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খান ও সাবেক সিটি মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।
এই দুই প্রার্থীকে ঘিরেই ভোটের মাঠে টানটান উত্তেজনা। জয় পরাজয়ের নানা হিসাব চলছে। যদিও সরকারি মহলের হিসাবে এডভোকেট আজমত উল্লা খান জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একটি সূত্রের দাবি ভোটের আগে সরকারি এক জরিপ তথ্য বলছে আজমত উল্লা খান ৪০ শতাংশের মতো সমর্থন পেতে পারেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি জায়েদা খাতুন ২০ শতাংশের মতো সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া আরেক প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমানের পক্ষে ৪ শতাংশ সমর্থন আসতে পারে। আজ সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে, চলবে বেলা চারটা পর্যন্ত।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএম মেশিন সহ ভোট গ্রহণ সামগ্রী। মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, পুলিশের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে ২০ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩০টি টিম ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যেই তারা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। ৫৭ টি ওয়ার্ডে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল টিম। ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকবে ১৯টি স্টাইকিং ফোর্স। ৪৮০ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবে। নগরের পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ইভিএম মেশিনসহ ভোট গ্রহণ সামগ্রী বিতরণ করা হয় সব কেন্দ্রে। ভোট কেন্দ্র গুলোতে প্রতিটি কক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সব কেন্দ্রেই ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ করা হবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, সব মিলে প্রায় ১৩ হাজার নিরাপত্তা কর্মী এই সিটির নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২০ থেকে ২২ জন থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার অধীনে সবার সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় একটি অবাধ ও সৃষ্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, কাউন্সিলর পদে ২৪৭ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন।
এই নির্বাচনের জন্য মোট ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭ টি। এর মধ্যে ৪৯১টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে।