তামাকের বিকল্প হিসেবে ভেপিং ও ই-সিগারেটের প্রচারণা

আইন-আদালত জনদুর্ভোগ তথ্য-প্রযুক্তি প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

ই-সিগারেট ও ভেপিং ব্যবহার উৎসাহিত করতে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে ভয়েস অব ভেপারস এবং এশিয়া হার্ম রিডাকশন অ্যালায়েন্স একটি সম্মেলন এবং গোলটেবিল বৈঠক করেছে। এসব আয়োজনের নেপথ্যে ছিল ফিলিপ মরিসের (পিএমআই) অর্থপুষ্ট ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর অনুদানপ্রাপ্ত সংস্থা এবং প্রতিনিধি। তবে এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ কিছু মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে, যা হতাশাজনক। প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং যেখানে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভয়েস অব ভেপারস দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্যের পক্ষে কাজ করছে। সংস্থাটি “World Vapers’ Alliance- এর অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে কাজ করছে যাদেরকে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি)।

উল্লেখ্য, পিএমআই এর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ‘ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক-ফ্রি ওয়ার্ল্ড’ এর নানা তৎপরতা জনস্বাস্থ্য এবং তামাকবিরোধী কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এফএসএফডব্লিউ মূলত ই-সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরনের ভ্যাপিং পণ্যের ব্যবহার ও বাজারজাতকরণকে উৎসাহিত করে থাকে। একারণেই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পরপই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, তামাক কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের সুস্পষ্ট স্বার্থ সংঘাত (conflict of interest) রয়েছে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ফাউন্ডেশনের সব ধরনের সহযোগিতা কিংবা যৌথ উদ্যোগ প্রত্যাহার করবে। সরকার এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও এই নীতি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও ডব্লিউএইচও এফসিটিসি সেক্রেটারিয়েট এক পৃথক বিবৃতিতে বলে, ‘তামাক কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যেকোন সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড হবে এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘণ।’ উদ্বেগের বিষয় হলো, বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেও সংগঠনটির তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতসহ বেশকিছু দেশ ‘ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক-ফ্রি ওয়ার্ল্ড’ এর বিতর্কিত কার্যক্রম প্রতিহত করতে সরকারিভাবে সংগঠনটির সাথে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও বাংলাদেশে এ ধরনের কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। এফসিটিসি এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও উচিত হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী তামাক কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত কোনো সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত না হওয়া এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ২০২১ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ভেপিং, ই-সিগারেটের মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ইটিপি) গুলোকে ‘মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৩২টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে। দ্রুতততম সময়ের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশেও এসব পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে।

বার্তা প্রেরক,

মেহেদি হাসান, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)

আরো পড়ুন : মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

 

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *