ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক জনদুর্ভোগ পুরুষ প্রচ্ছদ রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে রাশিয়ায়। দীর্ঘ ২৩ বছর পারমাণবিক শক্তিধর দেশটির ক্ষমতা তিনি কুক্ষিগত করে আছেন। ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের ওয়াগনার বাহিনী তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। ক্ষমতার এই দীর্ঘ সময়ে তার বিরুদ্ধে এমন চ্যালেঞ্জ কেউ জানাতে পারেননি। এ সুবাদে তিনি হয়ে উঠেছেন আয়রনম্যান। বিশ্ববাসীর কোনো হুঁশিয়ারি, সতর্কতায় কান দেননি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আগ্রাসন চালিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনকে। তার সেই আগ্রাসনের খেসারত দিচ্ছে বিশ্ববাসী।

সারাবিশ্বে বাজার ব্যবস্থাপনায় টালমাটাল। তিনি বিরোধী রাজনীতিক অ্যালেক্সি নাভালনিকে জেলে পুরে রেখেছেন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। রাশিয়ায় পুতিনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বললেই তার জীবন নিয়ে সংশয় আছে।

সেখানে ওয়াগনার বাহিনী বিদ্রোহ করে তাকে যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, তা কখনো কল্পনাও করেননি সাবেক কেজিবি বস পুতিন। এ অবস্থায় অনলাইন সিএনএনের সাংবাদিক নিক প্যাটন ওয়ালশ বলছেন, পুতিন ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে। রাশিয়ায় উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে নিবিড় দৃষ্টি রেখেছে বিভিন্ন দেশ। পর্যবেক্ষণ করছে তারা। কারণ, ওয়াগনার গ্রুপ- যার সদস্যরা হলেন ভাড়াটে সেনা, তাদের কারণে পুতিন তার দীর্ঘ শাসনে সবচেয়ে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ওয়াগনারদের বিদ্রোহ দেখিয়ে দিয়েছে রাশিয়া কতোটা দুর্বল। তাদের দুর্বলতা স্পষ্ট। পুরোপুরি দুর্বল তারা। রাশিয়া যত বেশি সময় আমার দেশে তার সেনা এবং ভাড়াটে সেনাদের রাখবে, তত বেশি বিশৃঙ্খলা, যন্ত্রণা এবং সমস্যায় পড়বে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

জেলেনস্কি টুইটারে লিখেছেন, যারা মন্দ পথ বেছে নেয় তারা নিজেকে ধ্বংস করে দেয়। দীর্ঘকাল ধরে রাশিয়া তার দুর্বলতা এবং তার সরকারের মূর্খতাকে ঢাকতে প্রচারণা চালিয়েছে। এখন তারা এতই বিশৃঙ্খলা যে, কোনো মিথ্যাই তা আড়াল করতে পারে না। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার প্রতি ‘মিথ্যা নিরপেক্ষতা পরিত্যাগ করতে এবং মস্কোর সেনাদেরকে ইউক্রেন থেকে বের করে দিতে কিয়েভকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেন, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা রাশিয়ায় নতুন অবস্থা দেখা দেবে। তিনি টুইটারে লিখেছেন, হয় একটি পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ হবে অথবা একটি আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতার হস্তান্তর হবে, অথবা পুতিনের পতনের পথ বের হবে।

পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁন্দ্রে দুদা বলেন- রাশিয়া পরিস্থিতি নিয়ে সকালে আমরা প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। আমাদের পূর্ব সীমান্তের বাইরের ঘটনাগুলো অব্যাহতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়লিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস বলেন- ১০০ বছর ধরে লিথুয়ানিয়ানরা মস্কোর নৃশংস দস্যুতন্ত্রে একপেশে হয়ে বসবাস করছে। তারা জানে যে, পরবর্তী বিশৃঙ্খল অবস্থা বিস্ফোরণ কেবল সময়ের ব্যাপার। আমরা বিভ্রান্ত নই। এর মধ্যে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই ইউক্রেনের জন্য বিজয় এবং ন্যায়বিচার। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সব পক্ষকে দায়িত্বশীল হতে এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পরে তাদের কয়কজনের সঙ্গে কথা বলবো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সব পক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ করা। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে- কয়েক ঘণ্টা রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিশেষ করে রাশিয়ান ন্যাশনাল গার্ডের আনুগত্য হবে এই সংকটটি কীভাবে কার্যকর হবে তার মূল বিষয়। এটি সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মিশেল টুইট করেছেন- রাশিয়ার পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইইউ। এটি স্পষ্টতই রাশিয়ার একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের প্রতি আমাদের সমর্থন অটল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে রাশিয়া ও ওয়াশিংটনের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র অ্যাডাম হজ বলেছেন- উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা ক্যালাস বলেন, রাশিয়ার পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করছে এস্তোনিয়া এবং মিত্রদের সঙ্গে এ বিষয়ে তথ্য বিনিময় করছে। আমি নিশ্চিত করতে পারি যে, আমাদের দেশে সরাসরি কোনো হুমকি নেই। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমি আমাদের জনগণকে রাশিয়ার কোনো অংশে ভ্রমণ না করার অনুরোধ করেছি। বার্লিনে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক সাতটি শিল্পোন্নত দেশের গ্রুপের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। একজন মুখপাত্র বলেন, বেয়ারবক সবেমাত্র জি৭-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, জার্মানি খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

আমরা ইউক্রেনকে সমর্থন করার দিকে মনোনিবেশ করি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিও মেলোনি বলেন, রাশিয়ার এ ঘটনা দেখিয়েছে কীভাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন রাশিয়ার মধ্যেও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। চেক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যান লিপাভস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের চলমান সামরিক আগ্রাসন এবং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইইউ এবং ন্যাটো দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতির হুমকি এটা। রাশিয়ান ফেডারেশনে ভ্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর সতর্কতা এখনো বহাল রয়েছে। কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম- জোমার্ট টোকায়ভ ফোনে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে টোকায়ভের কার্যালয়। রাশিয়ার এ ঘটনাকে তার অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বর্ণনা করেছে তারা। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কাতার। তারা সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।

আরো পড়ুন : আবু শাহেদ ইমনে ওয়েব সিরিজ ‘মারকিউলিস’

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *