আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উন্মাদনা নিজের চোখে দেখবেন বলে কোনো প্রকার আমন্ত্রণ ছাড়াই ঢাকায় আসতে চেয়েছিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এক প্রকার নিজ উদ্যোগেই গতকাল ঢাকায় পা রাখেন বিশ্বকাপ জয়ী এই আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। যে উন্মাদনা দেখতে ঢাকা আসেন মার্টিনেজ তার ছিটেফোঁটাও দেখতে পেলেন না তিনি। দর্শকদের জন্য কোনো প্রকার আয়োজন না রেখে মার্টিনেজকে সেই উন্মাদনা থেকে বঞ্চিত করেছেন আয়োজকরা। বঞ্চিত করা হয়েছে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। বিমানবন্দরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মার্টিনেজের সাক্ষাৎ পাননি জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও।
গতকাল ভোর ৫টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান মার্টিনেজ। তার আগেই মার্টিনেজকে এক পলক দেখতে অনেকে ছুটে যান বিমানবন্দরে। সেখানে দেখা মেলেনি। হোটেলের সামনেও ভিড় করেছিলেন। কিন্তু কালো কাঁচে ঘেরা গাড়িতে থাকায় সেখানেও তাকে দেখা যায়নি।
মার্টিনেজ একজন ফুটবলার হওয়া স্বত্তেও আয়োজক ‘নেক্সট ভেঞ্চার’ দেশের ফুটবলকে সম্পৃক্ত করেনি।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে দাওয়াত করা হলেও সেখানে আমন্ত্রণ পাননি দেশের কোনো ফুটবলার। জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বিমানবন্দরে মার্টিনেজের সাক্ষাতের চেষ্টা করেছেন, চেষ্টা করেন বিশ্বকাপ জয়ী এই গোলরক্ষের সঙ্গে একটি ছবি তোলার। আয়োজকদের অসহযোগিতায় সেটাও সম্ভব হয়নি। এমনকি সংবাদ মাধ্যমকেও ভিড়তে দেয়া হয়নি মার্টিনেজের আশপাশে।
এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে একজন লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনার এমি মার্টিনেজকে এনে গুটিকয়েক পরিবারের সঙ্গে আড্ডা আর কিছু ইউটিউবারকে কন্টেন্ট বানাইতে দেয়া কোনোভাবেই সমর্থন করছি না। তাকে স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা দেয়া যেতো। অন্তত আমাদের দেশের ফুটবলারদের সঙ্গে একটা সেশন রাখা যেতো। ফুটবলের উন্নতি হতো, খেলোয়াড়রা উৎসাহ পেতো। গ্যালারিতে সেটা উপভোগ করতেন অগনিত মানুষ।
জনপ্রতিনিধিরা যখন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের এজেন্ট হয়, দেখতে খারাপ দেখায়।’ আয়োজকদের ওপর ক্ষোভ ঝেরেছেন সাবেক ফুটবলাররাও। সাবেক তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন চুন্নু বলেন, ‘মার্টিনেজ কেন এসেছে সেটাই তো বুঝলাম না। খেলা দেখাতে এসেছে, ফুটবলের উন্নয়নের জন্য এসেছে নাকি অন্য কোনো স্বার্থে জানা নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, একজন বিশ্বতারকা ফুটবলার এসেছেন, তার পাশে তো একজন ফুটবলারের থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। এটাই মানাতো। সেই ফুটবলারদেরই ডাকা হলো না। মাশরাফিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এটাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তবে মাশরাফির পাশাপাশি কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ফুটবলারকেও আয়োজকরা বলতে পারতো। এই সম্মানটুকু দেয়া উচিত ছিল।’
সাবেক তারকা শেখ মোহাম্মদ আসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, ‘মাশরাফিকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এটা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। তবে এ দেশে অনেক তারকা ফুটবলার আছেন, যারা সম্মানের জায়গায় মাশরাফির চেয়ে কম নন। তাদেরকে সম্মান জানানো হয়নি। আমি মার্টিনেজকে যারা এনেছেন, তাদের ধিক্কার জানাই। আয়োজকরা এ দেশের কোটি কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকের হৃদয় গুঁড়িয়ে দিয়ে কেবল নিজের স্বার্থ হাসিল করতেই মার্টিনেজকে এনেছে। মাশরাফি মার্টিনেজকে ক্রিকেট দলের জার্সি উপহার দিয়েছেন। সেখানে একজন সাবেক অথবা বর্তমান ফুটবলার থাকলে তিনি ফুটবল দলের জার্সিটাও উপহার দিতে পারতেন। এটা অনেক লজ্জার ব্যাপার হয়ে গেল। বাংলাদেশ সম্পর্কে সে একটা ভুল ধারণা নিয়ে গেল।’
মার্টিনেজকে বাংলাদেশে আনে ফান্ডেড নেক্সটের প্রতিষ্ঠান নেক্সট ভেঞ্চার। বিমানবন্দর থেকে তাকে তারা সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় হোটেল ওয়েস্টিনে। হোটেলের রুম থেকে সরাসরি আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে নেমে গাড়িতে ওঠেন মার্টিনেজ। সেই গাড়িতে আবার কালো কাঁচ। পুলিশ ভ্যানের পেছনে ওই গাড়িতে বসে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ হোটেল থেকে বেরিয়ে যান ৯টা বাজার কিছুক্ষণ পর। ফটো সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে দৌড়াচ্ছেন, টিভি ক্যামেরাম্যানরা ক্যামেরা নিয়ে দৌড়ালেও ছবি বা ফুটেজ সেই অর্থে কেউই পাননি।
বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি প্রবল সমর্থনের খবর আর্জেন্টিনা দলেও পৌঁছে গিয়েছিল। বিশ্বকাপ জয়ের পরও তো বাংলাদেশকে নিয়ে আর্জেন্টিনায় কম কিছু হয়নি। শুধু ফুটবল সমর্থনের সূত্র ধরে আরেকটা দেশে দূতাবাস খুলে ফেলেছে কোনো দেশ- এমন কিছু তো ইতিহাসে হয়নি কখনো। এসব দেখেশুনেই এমিলিয়ানো মার্টিনেজের বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ। প্রবল কৌতূহলও। কিন্তু সেই কৌতূহলের কিছুই কি মিটলো? সাধারণ আর্জেন্টিনা সমর্থকদের সঙ্গে তো তার দেখাই হলো না!
এর দায় আয়োজকদের ওপর চাপিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, ‘আয়োজকরা বাফুফেকে সঙ্গে নিয়ে মার্টিনেজের সফরসূচিটা সাজালে সাধারণ ভক্ত-সমর্থকরা তাদের প্রিয় তারকাকে কোনো না কোনোভাবে কাছ থেকে দেখতে পারতেন। মিডিয়ার মাধ্যমেও সারা দেশের মানুষ জানতে পারতো মার্টিনেজের সফর সম্পর্কে।’ সারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে নেক্সট ভেঞ্চার্স কোন স্বার্থ হাসিল করতে চাইলো, সেটাই বড় প্রশ্ন।
আরো পড়ুন : ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইসরায়েলি হামলা ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে