রাজধানীতে এক সপ্তাহে ৫০৫ ‘ছিনতাইকারী’ গ্রেপ্তার

অনুসন্ধানী আইন-আদালত ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ফার্মগেটে ছিনতাইকারীদের হাতে পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামান খুন হওয়ার ঘটনায় গত সাত দিনে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। এতে রাজধানীজুড়ে ৫০৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতির চেষ্টাকালে ওই ৫০৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২০৮টি মামলা করা হয়েছে।

পবিত্র ঈদুল আজহার আগে রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সর্বশেষ ঈদের ছুটি শেষে ১ জুলাই ঢাকায় ফিরে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার। বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে অন্য একটি বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় তিনি ছিনতাইকারীদের আক্রমণের শিকার হন।

মনিরুজ্জামান নিহতের ঘটনার পর নড়চড়ে বসে ডিএমপি। ১ জুলাই ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক তাঁর অধীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগের ৫০ থানার পুলিশ ও ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে প্রতিদিন রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিটি থানার ছয়-সাতটি পুলিশ দল বিশেষ অভিযানে অংশ নেয়। প্রতিটি দলে থাকেন ছয় থেকে সাতজন।

রোববার রাতে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ঢাকা শহর ছিনতাইকারীমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এই বিশেষ অভিযান চলবে। গত এক সপ্তাহে যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা এর আগেও অনেকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের নাম ডিএমপির করা তথ্যভান্ডার এসআইভিএসে (সাসপেক্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম) আছে। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এই অপরাধীরা আবার পুরোনো পেশায় যুক্ত হন। ফলে হঠাৎ করে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে যায়।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ১ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতির চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার ৫০৫ জনের মধ্যে রমনায় ৪৬, লালবাগে ৭৩, মতিঝিলে ৪৪, ওয়ারীতে ২৭, তেজগাঁওয়ে ১৮৭, মিরপুরে ৬৬, গুলশানে ১১ ও উত্তরা বিভাগে ৫১ জন রয়েছেন।

রাজধানীতে কোন এলাকায় কত ছিনতাইকারী

সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিএমপির করা তথ্যভান্ডারের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে জড়িত ৬ হাজার ১৯৮ জনের ছবিসহ নাম, বয়স, বাবার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, আঙুলের ছাপ, গ্রেপ্তারের তারিখ, তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার সংখ্যা, গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তার নাম-পদবি ও মুঠোফোন নম্বর রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭৩৭ জন ছিনতাইকারী ও ৪ হাজার ৪৬১ জন ডাকাত।

ডিএমপির বিভাগ হিসেবে সবচেয়ে বেশি তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ও ডাকাত রয়েছে তেজগাঁও বিভাগে। সবচেয়ে কম মিরপুর বিভাগে। থানা হিসেবে ছিনতাইকারী ও ডাকাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভাটারা, শাহবাগ ও শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায়, ৩৪ জন করে। এরপর রয়েছে হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, তেজগাঁও, রমনা, হাতিরঝিল ও উত্তরা পশ্চিম থানায়। তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, সবচেয়ে কম ছিনতাইকারী ও ডাকাতের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে উত্তরখান, দক্ষিণখান ও উত্তরা পূর্ব থানায়।

কখন ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে যায়

বিশেষ অভিযানের তত্ত্বাবধানে যুক্ত ডিএমপি সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অভিযানের সময় সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর চারটা থেকে সকাল ছয়টার মধ্যে দূরপাল্লার বাস ঢাকায় পৌঁছায়। এ সময় যাত্রীরা বাসস্টেশন থেকে গন্তব্যে যাওয়ার সময় ওত পেতে থাকা ছিনতাইকারীদের আক্রমণের শিকার হন। এ ছাড়া ভোরে মাছ, সবজি ও কাঁচামাল বিক্রেতারা আড়তে পণ্য কিনতে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের আক্রমণের শিকার হন।

ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন দস্যুতা, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রতিদিনই ডিএমপির তথ্যভান্ডারে যুক্ত হচ্ছে।

আরো পড়ুন : নলছিটিতে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে ধর্ষন, থানায় মামলা দায়ের

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *