সিলেট অফিস: সিলেটে উপস্থিতি জানান দিতে আজ শনিবার নগরীর রেজিস্টারী মাঠে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত প্রশাসন থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে জামায়াত আশা ছাড়েনি। তাদের দাবি শেষ মুহুর্র্তে সমাবেশের অনুমতি পাবে। এই আশায় গণসংযোগ ও প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এদিকে সমাবেশ ঘিরে ধর-পাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১ টায় রেজিস্টারী মাঠের সামনে থেকে জামায়াতের সাত কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত কর্মীদের বিষয়ে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, শুনেছি আমাদের সাত কর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তবে তাদের সঠিক পরিচয় ও কি কারণে পুলিশ ধরেছে তা এখনও জানতে পারেনি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মাহমুদ জানান, রেজিস্টারী মাঠের সামনে থেকে সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোন নাশকতার সঙ্গে জড়িত কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, শনিবার সমাবেশের জন্য রেজিস্টারী মাঠ পরিদর্শন করতে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা যান। সেখান থেকে ফেরার সময় মাঠের পাশ থেকে সাত কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। আটক সাত জনের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় ওই সূত্র জানাতে পারলেও বাকি দুই জনের পারেনি। আটককৃতরা হলেন-সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার খশির গ্রামের সিদ্দিক আহমদের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৪৩), বালাগঞ্জ উপজেলার নূরপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে এএসএম রুবেল (২৩), কানাইঘাটের বড়দেশ গ্রামের আলী আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), নগরীর উত্তর বাগবাড়ি এলাকার মৃত এরফান উদ্দিনের ছেলে আবুবকর সিদ্দিক (৫৮) ও সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাগেরকোনা গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩৮)।
বড় ধরণের শোডাউন করার পরিকল্পনা নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ সমাবেশ ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দলের জেলা ও মহনগরীর অর্ন্তভ‚ক্ত প্রত্যেকটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা যেকোনমূল্যে সমাবেশ সফল করতে চায়।
কেয়ারটেকার সরকার পুন:প্রতিষ্ঠা, দলের আমীর ও নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ দশ দফা দাবিতে এই সমাবেশ করবে দলটি। এক দশক পরে গত ১০ই জুন রাজধানীতে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী। এরপর দলটি নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। আর এসবের মধ্যেই ঢাকার বাইরে সিলেটে সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে জামায়াত। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম এবং বিভাগীয় বড় শহরগুলোতে সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
দলীয়সূত্র জানায়, দশ দফা দাবিতে সিলেটে সমাবেশ করতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগর শাখা। গত বুধবার বিকেল ৩ টার দিকে দলের মহানগর শাখার সেক্রেটারী মো. শাহজাহান আলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসএমপিতে যান। এসময় নেতৃবৃন্দ মহানগর শাখার সেক্রেটারী মো. শাহজাহান আলী স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র এসমপিতে জমা দিয়েছেন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান মহানগর শাখার সেক্রেটারী মো. শাহজাহান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আবেদন জমা দেওয়ার সময় পুলিশ কমিশনার ছিলেন না। আমরা অন্য একজন কর্মকর্তার কাছে আবেদন জমা দিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন কমিশনার আসলে তারা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন। কিন্তু শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অনুমতি পাইনি।তবে আমরা আশা করছি প্রশাসন আমাদের সমাবেশের অনুমতি দিবে।
পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন- মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, সিলেট বারের সিনিয়র আইনজীবী আজিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আব্দুল খালিক।
জামায়াতের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিলেট মহানগরীর উদ্যোগে কেয়ারটেকার সরকার পুন:প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম ওলামার মুক্তি সহ দশ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শনিবার দুপুর ২টায় সিলেট সাব রেজিস্টার মাঠে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত কর্মসূচী আমরা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সম্পন্ন করতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।
সমাবেশের বিষয়ে সিলেট জেলা জামায়াতের উত্তরের আমীর আনোয়ার হোসেন খান জানান, সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দলীয় একটি প্রোগ্রামে আছি। প্রায় ৭ মাস পর সিলেটে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর নগরীতে বড় ধরনের শো-ডাউন করা হয়েছিল। এরপর আর বড় কোন মিছিল-সমাবেশ হয়নি। আশা করি প্রশাসন আমাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দিবে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকার আমাদের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। আজ আমরা সিলেট মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। এজন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনারের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি অনুমতি পাবো।
এ ব্যাপারে এসএমপি কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন, জামায়াতের আবেদন পেয়েছি। তবে তাদের সমাবেশে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কাওছার আহমদ
আরো পড়ুন : ধূমপন মুক্ত সমাজ গড়তে সাংবাদিকদের নিয়ে কর্মশালা করেন বাংলাদেশ ব্লাইন্ড মিশন।