মনে পড়ে ই-অরেঞ্জ কেলেঙ্কারির হোতা সোহেল রানার নাম। যাকে নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল হইচই। গ্রাহকের ১১শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার কাহিনী আজও মানুষের মুখে মুখে। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ শেষ সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব। সোহেল রানা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের নাম ব্যবহার করে তিনি কতো যে অপকর্ম করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। ই-অরেঞ্জ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে পড়লে তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। এখন সোহেল রানা ভারতেও নেই। তিনি এখন অবস্থান নিয়েছেন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ বাহামায়। বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ অবগত।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ওয়েস্টার্ন এয়ারের একটি ফ্লাইটে পালিয়ে যান বাহামায়।
এ সময় তিনি জাল ভারতীয় এনআইডি ব্যবহার করেছেন। এ কারণে তিনি যে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সোহেল তা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ধরতে পারেনি। কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি বাহামায় গেছেন। এর আগে এই সোহেল ভারতে গ্রেপ্তার হন। নিয়মিত কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থানায় হাজিরা দিতে হবে শর্তে আদালত তাকে জামিন দেন। কিন্তু তিনি থানায় নিয়মিত হাজিরা দেননি। পরে তার নামে ভারতীয় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তদন্তে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে সোহেল বাহামায় পালিয়ে গেছেন।
সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানে আটক হন। তাকে রাখা হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে। একপর্যায়ে সোহেল রানা জামিনের আবেদন করেন। শর্তসাপেক্ষে জামিনও পান। আদালতকে কোচবিহার জেলা পুলিশ জানিয়েছে, একটি ই-মেইল পাঠিয়ে সোহেল রানা জানান যে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি হাজির হতে পারেননি। তিনি বিদেশ যাবেন চিকিৎসা করাতে, তাই আপাতত তিনি আসতে পারবেন না। এরপরই সোহেলের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদ্য বিদায়ী এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সোহেলের অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু সোহেল এরমধ্যে ভারতে পালিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, সোহেল ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারা নিয়মিত ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কোচবিহার পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে সোহেল বাহামায় পালিয়ে গেছে।’
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোহেল পালিয়ে যাওয়ায় তারা কোচবিহার পুলিশের দায় দেখছেন। কারণ, তাকে ফেরাতে বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তিন দফা চিঠি দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ চিঠি দেয়া হয় ২০২২ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর। কিন্তু সেই চিঠিরও কোনো উত্তর পায়নি পুলিশ সদর দপ্তর।
সূত্র মতে, ২০২২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার সাজা ঘোষণা করেন কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। এরপর থেকে কলকাতা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ছিলেন সোহেল রানা। জেলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জামিন আবেদন করেন। থানায় প্রতি সপ্তাহে সশরীরে হাজিরা ও মেখলিগঞ্জ থানা এলাকার বাইরে না যাওয়ার শর্তে গত ৮ই ডিসেম্বর তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
সিআইডি জানায়, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে পণ্য দেয়ার কথা বলে অগ্রিম নেয়া ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে সোহেল রানা। ওই ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমানসহ মোট ৯ জন।
ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের আপন ভাই ভারতে আটক হওয়া ইন্সপেক্টর শেখ সোহেল রানা। সূত্র জানায়, আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত সিআইডি করছে।
সূত্র জানায়, ভারতে থাকলে তাকে ফেরানোর ক্ষেত্রে সহজ হতো। তারপরও ৩ বার চিঠি দেয়ার পর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভারত থেকে বাহামায় তিনি পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে ফেরানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। সোহেল কী এখন বাহমায় আছেন না সেখান থেকে তৃতীয় কোনো দেশে গেছেন তার খোঁজ-খবর করছে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা।
আরো পড়ুন : দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চাপ দিয়ে কোনো দেশ কিছু করাতে পারবে না