কাওছার আহমদ, সিলেট: সিলেটে জামায়াতের দাবি নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তবে পুলিশের বক্তব্য হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারীর কারণে জামায়াত-শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেনি। কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালন করার জন্য রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় নগরীর সোবহানীঘাট এলাকায় জড়ো হলে পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এমন তথ্য জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালী থানার ওসি আলী মাহমুদ। তিনি বলেন, জামায়াত মিছিল করার জন্য সোবহানীঘাট এলাকায় প্রস্তুতি নিয়েছিল কিন্তু পুলিশের নজরদারীর কারণে পারেনি।
এদিকে, নগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দাবি করেন নগরীর কোন এক জায়গায় দলীয় কর্মসূচি তারা পালন করেছেন। রবিবার বিকেলে বিক্ষোভের ছবি সহ একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠান।
এর আগেও সিলেটে উপস্থিতি জানান দিতে নানা ইস্যু নিয়ে বড় ধরনের শো-ডাউনের পরিকল্পনা করেছিল জামায়াত কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা সফল করতে পারেনি। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে দু’দফা সমাবেশের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর বিক্ষোভ মিছিল করার প্রস্তুতি নেয়, তাও পারেনি। সবধরনের কৌশল অবলম্বনের পরও দলীয় কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়ে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সিলেট জেলা জামায়াতের উত্তরের আমীর আনোয়ার হোসেন খান বলেন, দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে মিছিল-মিটিং করার সুযোগ দেওয়া হয়। শুধু আমাদেরকে মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছেনা। আমরা মাঠে সর্বোচ্চ শান্তি শৃঙ্খলা বজায়ে রেখে দলীয় কর্মসূচি পালন করার কথা জানানোর পরও পুলিশ সুযোগ দিচ্ছেনা,এটা গণতান্ত্রিক চর্চা নয়।
এদিকে পুলিশের বক্তব্য হলো নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশংকায় জামায়াতকে মিছিল-মিটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি। জামায়াত কর্মসূচির নামে নাশকতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
জামায়াত সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর নগরীতে বড় ধরনের শো-ডাউন করেছিল দলটি। এরপর আর বড় কোন মিছিল-সমাবেশ করেনি। প্রায় ৭ মাস পর কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে সিলেটের রাজপথে নামার চেষ্টা করে। সবধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে কর্মসূচি সফল করতে পারেনি। কেয়ারটেকার সরকার পুন:প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামার মুক্তি সহ দশ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথমে ১৫ জুলাই নগরীর রেজিস্টারি মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়। অনুমতি চেয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত আবেদনও করে মহানগর জামায়াত। কিন্তু অনুমতি পায়নি। এরপর তারিখ পারিবর্তন করে আবার ২১ জুলাই সমাবেশের ঘোষণা দেয়। ওই তারিখে পুলিশের অনুমতি পাওয়ার জন্য নানা তৎপরতা চালায় কিন্তু ব্যর্থ হয়। দুই দফা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর সমাবেশ থেকে সরে আসে জামায়াতে ইসলামী। এ অবস্থায় বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৮ জুলাই নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করার চেষ্টা করে। এর আগে মিছিলের অনুমতি চেয়ে এসএমপি কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত আবেদনও করে মহানগর জামায়াত। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এরপরও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মিছিলের উদ্দেশ্যে নগরীর বন্দর বাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, রিকাবিবাজার ও দরগা গেট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান নেয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে মিছিল বের করেনি জামায়াত। নগরীর প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশের তৎপরতায় ব্যর্থ হয়ে পরদিন ২৯ জুলাই সকাল সাড়ে নয়টায় পুলিশের অজান্তে নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল বের করে দলটি। কিছুদূর এগুতেই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মিছিলটি পন্ড হয়ে যায়। মুহুর্তেই নেতাকর্মীরা ছিটকে পড়েন।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন, আমি ছুটিতে আছি। কোতোয়ালী থানার ওসির সাথে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কাওছার আহমদ
আরো পড়ুন : সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের পূর্র্ণ সভাপতি হলেন শফিক চৌধুরী