গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার ট্র্যাজেডির ৫ মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত। গত ৭ই মার্চ বিকালে সিদ্দিকবাজারের নর্থসাউথ রোডে সাততলা ওই ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনার পরপরই পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও ডিএমপি’র সিটিটিসি বিভাগ। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্র জানায়, এ ঘটনার পরে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সিটিটিসির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পরে কমিটিতে আরও সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়। এর আগে দুই বার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এ ঘটনায় রাজধানীর বংশাল থানায় মামলা হলেও পরবর্তীতে ডিএমপি’র সিটিটিসিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। সিটিটিসি সূত্র জানায়, বিস্ফোরণের এর ঘটনায় বিশেষ করে প্ল্যানিংয়ের কিছু ঝামেলা ছিল। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। কাগজপত্র পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্টের (ব্যবস্থাপনার) গড়বড় ছিল। তবে সেটা কোন পর্যায়ের তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এটা নিয়ে তদন্ত কাজ করছে সিটিটিসি। এই গরমিলটা কেন হয়েছে সেটাই এখন তদন্তের বিষয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা তিতাস, সিটি করপোরেশন এবং রাজউকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এবং ভবনের ক্ষেত্রে তাদের যে প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা ছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে সিটিটিসি। সিটিটিসি’র গঠন করা কমিটি অনেকগুলো বিষয় নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে।
এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার (স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিভাগ) মিশুক চাকমা বলেন, আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেকোনো সময় প্রতিবেদন প্রদান করা হতে পারে। এর আগে দু’বার তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো সময় কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সভা ডেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতে পারে। তিনি বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে তিন জনকে প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এখন কারা হেফাজতে রয়েছেন। পরবর্তীতে এজাহারে গ্রেপ্তারকৃত আসামির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সেটা তদন্ত শেষে বলা যাবে।
তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে কোনো বিস্ফোরক উপাদান পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত আমরা গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছি। যেটা এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটাতে সহায়তা করে থাকতে পারে বলে জানান তিনি। এর আগে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২৪ জনের প্রাণহানি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে বংশাল থানায় হওয়া মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ গত ২৫শে জুলাই ধার্য করা হয়। এদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক এই তারিখ ধার্য করেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মজিবুর রহমান প্রতিবেদন দাখিল না করায় আদালত নতুন তারিখ ধার্য করেন। ঘটনার পরে ভবনের দুই মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনের বেসমেন্টের স্যানিটারি ব্যবসায়ী মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ওয়াহিদুর ও মতিউর সম্পর্কে আপন দুই ভাই।
সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে স্যানিটারি ও গৃহস্থালি সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। বিস্ফোরণে ভবনটির দেয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে পড়ে যায়। ভবনের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশের কয়েকটি ভবনও। এ ঘটনার একদিন পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। পরে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় বংশাল থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করে পুলিশ।
মামলায় বলা হয়, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি যথাযথ নিয়ম মেনে (বিল্ডিং কোড) নির্মাণ করা হয়নি। ভবনটিতে আন্ডারগ্রাউন্ড বা বেসমেন্ট তৈরির অনুমোদন ছিল না। অবৈধভাবে নির্মিত এই বেসমেন্ট বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না। সেখানে নির্মাণসামগ্রী মজুত ও বিক্রির কাজে ব্যবহার করা হতো। বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে কুইন্স ক্যাফে নামে রান্নাঘর করা হয়েছিল। অথচ গ্যাস লিকেজ সমস্যা ও পয়ঃবর্জে সৃষ্ট গ্যাস নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল না। ভবনের মালিক ও ব্যবহারকারীগণ অর্থের লোভে অবৈধভাবে বেসমেন্ট ও আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবহার করে আসছিলেন।
আরো পড়ুন : রুপিতে বাণিজ্য দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে